মা বললেন, বাবা সাব্বির-তুমি বউমার জন্য কিছু আনো নাই?
ছোট ভাইটা বলে উঠলো, আব্বা-ভাবির জন্য ভাইয়া জমি কিনেছে! পূর্বাচলে পাঁচ কাঠা !
ভাবির জন্য মানে কী!
ভাবির জন্য মানে হচ্ছে, ভাবির নামে পাঁচ কাঠা জমি কিনেছে। সাবাস! এই না হলে আমার ছেলে? স্ত্রৈণ একটা! বলেই তিনি ধুপধাপ পা ফেলে নিজের ঘরে চলে গেলেন ।
শ্বশুরের কণ্ঠে কী ছিল কে জানে? স্নেহা তাকালো স্বামীর দিকে গভীর কালিমায় ছেয়ে গেছে তার মুখ। বোটানির ছাত্রী স্নেহা। বাংলায় তেমন একটা দখল নেই বললেই চলে। গল্পের বই কবে পড়েছে মনে পড়ে না। দু-একটা যা-ও পড়া হয়েছে, সেগুলো সায়েন্স ফিকশন আর নয়তো বিজ্ঞান বিষয়ক ম্যাগাজিন। দুপুরে একটু সুযোগ পেয়ে চুপচাপ চলে গেল পুকুর ঘাটে। গুগল সার্চ করে ‘স্ত্রৈণ' শব্দের মানে খুঁজতে যেয়ে যা পেলো, সেটা পড়ে শ্বশুরের রাগের কারণ খুঁজে পেল এবং একাই খুব একচোট হেসে নিল ।
এই গল্পগ্রন্থে এরকম আরও পঁচিশটি গল্প রয়েছে, যাতে মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্ত শ্রেণির মানুষের দৈনন্দিন চাওয়া-পাওয়ার বিস্তর ব্যবধান, বনেদী-সম্ভ্রান্ত পরিবারগুলোর আর্থিক করুণ পরিণতি, লোভের কারণে আত্মীয় ও রক্তিয় সম্পর্কের বৈরীতা ইত্যাদির পাশাপাশি মনুষ্যত্বহীনতা, মানবিক দৈন্যতার কাহিনিও স্থান পেয়েছে। নিখাদ ভালোবাসার গল্পের সাথে সাথে বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও অস্থিরতাও এ গ্রন্থে উঠে এসেছে।
সুতরাং বলা যায়, বিষয়বৈচিত্র্যে, ভাষা ও সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে লেখকের প্রগাঢ় অনুভূতি ও জ্ঞানের বিচ্ছুরণ ঘটেছে প্রতিটি গল্পে, যা সকল শ্রেণির পাঠকের নিকট সমাদৃত হবে নি:সন্দেহে।
ফেরদৌসী মজুমদার জন্ম ১৮ জুন ১৯৪৩। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ও আরবিতে এমএ। পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন শিক্ষকতাকে । বর্তমানে সানবিমস স্কুলের সিনিয়র শিক্ষিকা। ৫০ বছর ধরে মঞ্চ ও টেলিভিশনে অগণিত নাটকে তার নানা ধরনের স্মরণীয় চরিত্রচিত্রণ এখনাে দর্শকের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। অভিনয় করেছেন দেশের বাইরে ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরে । অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে লাভ করেছেন একুশে পদক, জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলাে আজীবন সম্মাননা এবং ডেইলি স্টার আজীবন। সম্মাননাসহ দেশি-বিদেশি নানা পুরস্কার ও সম্মাননা। বাংলা একাডেমি তাকে দিয়েছে। সম্মানসূচক ফেলােশিপ। স্বামী রামেন্দু মজুমদার ও একমাত্র সন্তান ত্রপা মজুমদার নাটকের জগতে স্বকীর্তিতে উজ্জ্বল।