ভাষা শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়; এটি একটি জাতির সংস্কৃতি, চিন্তাশক্তি ও অনুভূতির প্রতিফলন। যখন কোনো ভাষা শৈল্পিক উৎকর্ষে পৌঁছে যায়, তখন তা শুধু শব্দগুচ্ছের সমাহার নয়, বরং এক অনন্য শিল্পরূপ ধারণ করে। আরবি ভাষা তেমনি এক ভাষা, যা অলঙ্কার, ব্যাকরণ, ছন্দের সৌন্দর্য ও প্রজ্ঞার সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। কিন্তু এই ভাষার প্রকৃত শীর্ষসীমা দেখা যায় কুরআনের মধ্যে, যা মানব ইতিহাসে এক অলৌকিক ভাষাগত নিদর্শন হিসেবে চির বিস্ময়ের উৎস হয়ে আছে। কুরআনে শুধু একটি ঐশী গ্রন্থ নয়, বরং ভাষার অলৌকিক জীবন্ত নিদর্শন।
ড. সালেহ আস-সামারাঈ, যিনি নিজেই একজন ভাষাবিদ, তিনি আরবী ভাষা ও কুরআনের অলৌকিকতার বিস্ময়কর সব আবিষ্কার করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, কুরআনের ভাষাগত সৌন্দর্য, শৈল্পিক গঠন ও শব্দ ব্যবহারের গভীরতা এক পরম বিস্ময় ও প্রজ্ঞার বহিঃপ্রকাশ। কুরআনের শব্দচয়ন, বাক্যগঠন, ছন্দময়তা এবং ভাবসম্প্রসারণ এক অপার বিস্ময়ের জগৎ সৃষ্টি করে, যা হাজার বছর পরেও অনবদ্য ও অতুলনীয়। এটি কেবল সাহিত্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং ভাষাগত বিস্ময়ের এক অপরাজেয় প্রমাণ।
এই গ্রন্থে উস্তাদ নোমান আলী খান ড. সালেহ আস-সামারাঈ এর বই থেকে অনুপ্রেরণাসহ আরো অনেক আলেমদের গবেষণার কুরআনের ভাষাগত বিস্ময়কর কাজগুলো থেকে ৫৬টি বিস্ময় তুলে এনেছেন, যা পাঠকদের জন্য এক অনন্য বুদ্ধিবৃত্তিক ও আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতার সঞ্চয়ন হবে। এটি শুধু ভাষার সৌন্দর্য অনুধাবনের জন্য নয়, বরং কুরআনের অলৌকিকতার প্রতি নতুন করে চিন্তা করার দাওয়াতও বয়ে আনে; যা আপনাকে বলতে বাধ্য করবে যে, এই কুরআন কোনো মানুষের পক্ষে রচনা করা অসম্ভব!
পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত মার্কিন লেখক এবং ইসলামি বক্তা নোমান আলী খান এর বই সমূহ ধর্মীয় যুক্তিতর্কের জন্য মুসলিমদের নিকট জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তার ‘ডিভাইন স্পিচ: এক্সপ্লোরিং কুরআন অ্যাজ লিটারেচার’ বইটি মুসলিম বিশ্বে বেশ আলোড়ন তোলা একটি বই। এ বই তাকে লেখক এবং ধর্মীয় যুক্তিবিদ হিসেবেও খ্যাতি এনে দিয়েছে। বর্তমানে তিনি ‘দ্য বাইয়্যিনাহ ইন্সটিটিউট ফর অ্যারাবিক অ্যান্ড কুর'আনিক স্টাডিজ’ এর সিইও এবং প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৬ সালে তিনি এ প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। আমেরিকান মুসলিদের নিকট তুমুল জনপ্রিয় এ বক্তা তার ইসলামিক জ্ঞান এবং যুক্তি-তর্কের দ্বারা মুসলিম বিশ্বের অন্যতম পরিচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। ইসলামিক ব্যক্তিত্বদের জীবনীভিত্তিক ‘দ্য ফাইভ হান্ড্রেড মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল মুসলিমস’ এর তৃতীয় সংস্করণে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিমদের একজন হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। নোমান আলী খান ১৯৭৮ সালে পূর্ব জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সেসময় পাকিস্তানি কূটনীতিক হিসেবে জার্মানিতে কর্মরত ছিলেন। বাবা-মা উভয়েই পাকিস্তানি হলেও নোমানের পাকিস্তানে বেশি দিন থাকা হয়নি। বাবার কর্মস্থল পরিবর্তনের কল্যাণে সৌদি আরবে ৬ বছর বসবাস করার পর আমেরিকায় চলে আসেন নোমান। এরপর থেকে আমেরিকাতেই থাকছেন এই ধর্মীয় বক্তা। ধর্মীয় শিক্ষায় তার হাতেখড়ি হয়েছিল সৌদি আরবেই। এরপর আমেরিকাতেই তিনি চালিয়ে গেছেন ক্লাসিক্যাল আরবি শিক্ষা। বর্তমানে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের ডালাসে বসবাস করছেন তিনি। নোমান আলী খান বাংলা বই লেখেননি, তথাপি তার ‘ডিভাইন স্পিচ’ এবং ‘রিভাইভ ইয়োর হার্ট’ সহ বেশ কিছু বই বাংলায় অনূদিত হয়েছে। এছাড়াও, ‘প্রশান্তির খোঁজে’ এবং ‘বন্ধন’ বইগুলোও রয়েছে নোমান আলী খান এর বই সমগ্রতে।