মানব জীবন বিচিত্র অভিজ্ঞতায় ভরা যেন কোনো বনাঞ্চলের নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি, একত্রে যাদের সহঅবস্থান। ড. ডি. এম. ফিরোজ শাহ্র তৃতীয় গল্পগ্রন্থ মাদার ইন কার্লস্টাড-এ প্রকাশিত ১৮টি গল্পে জীবনের এমন বিচিত্র অভিজ্ঞতার কথাই বর্ণিত হয়েছে যেগুলোর স্বাদ আলাদা হলেও বিচ্ছিন্ন নয়। ওস্তাদ যেমন কৃপণ তেমনি নাটকীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে পটু। অমানিশা গল্পটিতে আমেরিকার যান্ত্রিক জীবনের অমানবিক দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। ডা. রুটি কাশেম জানান দিচ্ছে সমাজে কিভাবে শিক্ষা-দক্ষতা ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ পেশার অনুশীলন হচ্ছে যা দেখার কেউ নেই। মাদার ইন কার্লস্টাড গল্পে চিরন্তন মাতৃত্ব ফুটে ওঠেছে। পতন গল্পটি মনে করিয়ে দিচ্ছে চারিত্রিক অধঃপতন সংসারে কিভাবে অশান্তি ডেকে আনে ও সর্বনাশের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যায়।
মানুষের জীবনে প্রথম প্রেম আসে অনেকটা অজান্তেই যার বহিঃপ্রকাশ ফার্স্ট লাভ গল্পটি। কিশোর জীবনের প্রথম প্রেম সারাটা জীবন তাড়িয়ে বেড়ায় প্রায় সবাইকে, কেউ প্রকাশ করেন, কেউ করেন না। নালু ফরাজী একজন সৃষ্টিশীল মানুষ হলেও তার জীবনের সুন্দর পরিসমাপ্তি ঘটেনি। ছাপড়া মসজিদে পাওয়া যায় হায়দার সাহেবের মজাদার সব অভিজ্ঞতা, আবার বুড়ি ও গাংচিল গল্পে দুইজন সাহসী নারীর চরিত্র ফুটে ওঠে। বিদেশে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে সংগ্রাম আর বিভেদ থাকার পরেও দেশ আর দেশের মানুষকে ভালোবাসে তার প্রামাণ্য দলিল একজন মিজান গল্পটি। এ ছাড়া মোশাই গল্পটি একজন খেটে খাওয়া মানুষের মূর্তপ্রতীক।
গল্পকার ড. ডি. এম. ফিরোজ শাহ্ দেশ ও বিদেশের বিচিত্র অভিজ্ঞতায় যেভাবে গল্পের প্লট সাজিয়েছেন তা সকল শ্রেণির পাঠকের ভালো লাগবে আশা করি।
ড. ডি. এম. ফিরোজ শাহ্, জন্ম ০১ আগস্ট ১৯৬৯, কুতুবপুর, শিবচর, মাদারীপুরে। স্বনামধন্য চিকিৎসক পিতা ডা. মমিন উদ্দিন আহমেদ এবং মা রহিমা বেগমের ষষ্ঠ সন্তান তিনি। পেশা অধ্যাপনা। বর্তমানে তিনি সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন। একজন শিক্ষক প্রশিক্ষক হিসেবে দেশব্যাপী সুখ্যাতি থাকলেও ভালো লাগে নজরুলের দুরন্তপনা, শরৎচন্দ্রের বোহেমিয়ান জীবন, বুদ্ধদেবের নিসর্গ আর সৈয়দ মুজতবা আলীর দেশ ভ্রমণ। এশিয়া, ইউরোপ ও আমেরিকার বহু দেশসহ বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়িয়েছেন। মধ্যরাতের সুনসান নিরবতা আকর্ষণ করে প্রবলভাবে, খরতাপে ভিজতে ভালো লাগে, পাহাড়ের উচ্চতা আশা জাগায়, সমুদ্রের গভীরতা ভাবতে শেখায়। নদী-নারী-প্রকৃতি এ নিয়ে তাঁর কৃতি। মানব-মন, দ্বন্দ্ব, সংঘাত, প্রেম, ঈর্ষা আর আশা এ সবের প্রতি নিগূঢ় ভালোবাসা। নানা ধরনের রচনার সংখ্যা প্রায় ৪০টি। ১৯৯৬ সাল থেকে একাডেমিক গ্রন্থ রচনায় নিয়োজিত রয়েছেন। তাঁর বই জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্বদ্যিালয় ও সরকারের টিকিউআই প্রকল্প কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে। মিতা ট্রেডার্স থেকে প্রকাশিত বিএড কর্মসূচির আলোচিত বইসমূহ হলো- ভূগোল শিক্ষণ, মাধ্যমিক শিক্ষা, শিখন-শেখানো দক্ষতা ও কৌশল, শিক্ষায় গবেষণা ইত্যাদি। আগামী প্রকাশনী থেকে ২০০৬ সালে প্রকাশিত হয় আলোচিত গল্পগ্রন্থ হৃদয়ে রক্তক্ষরণ এবং ২০০৭ সালে ইরাবতী। ২০১৯ সালে তাঁর আলোচিত ভ্রমণ কাহিনী ফিলিপাইন: রহস্যঘেরা এক মায়াবী দ্বীপরাষ্ট্র, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাসংক্রান্ত কর্ম নিয়ে গবেষণামূলক গ্রন্থ বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাদর্শন, ২০২১ সালে উপমহাদেশের শ্রেষ্ঠ দশ রাজনীতিবিদ, ২০২২ সালে উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও গারো পাহাড়ের খোঁজে (ভ্রমণ কাহিনি) আগামী প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়।