ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের সবচেয়ে প্রভাবশালী সম্রাজ্ঞীর নাম নূরজাহান। ভুবন-বিখ্যাত রূপের অধিকারী এই নারীর রূপ ও গুণের বর্ণনা ছিল কিংবদন্তিতুল্য। নামের মাঝেই যেন এর বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছিল।
মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তাঁর ঘটনাচক্রে দেখা হয় মীনা বাজারে। অনেক রমণীর ভিড়ের মাঝেও সম্রাটের দৃষ্টি কাড়েন এই অপূর্ব সুন্দরী। সম্রাট তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হন। সেটা ১৬১১ সালের ঘটনা। এর কয়েক মাসের মধ্যেই সম্রাট তাঁর পাণি গ্রহণ করেন-বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীরের আঠারতম পত্নী। তিনি তাঁর শেষ পত্নী। নূরজাহান হয়ে ওঠেন মুঘল সাম্রাজ্যের একমাত্র সম্রাজ্ঞী। ক্ষমতাধর, প্রচণ্ড বুদ্ধিমতী, হৃদয়বতী, কবি-শিল্পী ও সৌন্দর্যপ্রেমী এক জগদ্বিখ্যাত অপ্রতিদ্বন্দ্বী নারী হিসেবে তাঁর আবির্ভাব ঘটে। অন্তঃপুর পেরিয়ে তাঁর ভূমিকা সম্রাটের দরবার ও সাম্রাজ্য পরিচালনায় বিস্তৃত হয়।
সম্রাট জাহাঙ্গীরের শেষ বয়সে তাঁর পুত্রদের মধ্যে সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে লড়াই করুণ পরিণতি বয়ে আনে। সেইসঙ্গে সম্রাট ও সম্রাজ্ঞীর জীবনেও নেমে আসে দুঃসময়। সৎ ছেলে শাহজাহান ও আপন ভাই আসফ খানের দ্বারা নূরজাহান অন্তরীণ হন লাহোরে। একাকী বন্দী জীবন। জীবনের শেষ দিন অবধি।
অসংখ্য ঐতিহাসিক দলিল-দস্তাবেজ ঘেঁটে সম্রাজ্ঞী নূরজাহানকে ঘিরে মুঘল সাম্রাজ্যের ঐ সময়কালের ইতিহাস, সংস্কৃতি, শিল্পবোধ ও রাজনীতির দেশি-বিদেশি কূটচালের বিশদ চিত্র তুলে ধরেছেন বিখ্যাত নারী লেখক এলিসন ফিন্ডলি। আর তাই তাঁর এই গ্রন্থ সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়েছে মুঘল ঐতিহ্য সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য রচনা হিসেবে।
বাংলা ভাষাভাষী পাঠকের কাছে এমন অমূল্য পাঠ তুলে ধরার উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই গ্রন্থটির প্রথম সাহসী বাংলা অনুবাদ এটি।