বইটিতে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর আত্মপরিচিতি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, পাকিস্তান আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকার আন্দোলন, স্বাধীনতার সশস্ত্র সংগ্রাম, স্বাধীনতা উত্তরকালে আওয়ামী-বাকশালী একদলীয় স্বৈরশাসনের পতনের লক্ষে ১৫ আগস্ট বিপ্লব, ২-৩ নভেম্বর খালেদ-চক্রের প্রতিক্রিয়াশীল ব্যর্থ ক্যু দাতা এবং ৭ নভেম্বরের মহান সিপাহী-জনতার বিপ্লব, জেনারেল জিয়া, জেনারেল এরশাদ এবং বেগম খালেদা জিয়ার শাসনকালে সেনা পরিষদের অবদান, পরবর্তী পর্যায় বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ ঘটনাবলি লেখার চেষ্টা করেছেন লেখক, ব্যক্তিগত এবং সহযোদ্ধাদের অভিজ্ঞতার আলোকে, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, ইতিহাস গবেষক এবং বোদ্ধাজনদের বিচার-বিশ্লেষণের সুবিধার্থে।
লেখকের ১৯৯৬ সালে প্রকাশিত ‘যা দেখেছি যা বুঝেছি যা করেছি’ বইটির ধারাবাহিকতাতে লেখা ‘জিয়া থেকে খালেদা অতঃপর’। তাই লেখার সারবস্তুর সঠিক উপলব্ধি এবং বিচার বিশ্লেষণের জন্য বইটি পাঠকদের পড়াটা জরুরি।
বইটি প্রকাশের মূল উদ্দেশ্য হলো, দেশবাসী বিশেষকরে তরুণ প্রজন্ম যাতে তথ্যভিত্তিক উপাদানগুলো থেকে সত্যকে খুঁজে নিতে পারেন। চিনে নিতে পারেন বিগত চার দশকের উপর সময়কাল ধরে যারা ক্ষমতার নাগরদোলায় পালাবদলের জাতীয় স্বার্থবিরোধী সমঝোতার রাজনীতি নিজেদের হাতে কুক্ষিগত রেখে জনগণকে দ্বিধাবিভক্ত করে অপার সম্ভাবনার দেশটাকে অনিশ্চিত অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে নিজেদের স্বকীয়তা এবং অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন করে তুলেছেন, তাদের আসল চেহারাটা। ঠিকভাবে অতীত ইতিহাসের আলোকে নেতা-নেত্রীদের চরিত্র না জানলে বর্তমান ও ভবিষ্যতে কোনো জাতি কখনোই সঠিক নেতৃত্ব এবং পথের সন্ধান খুঁজে পেতে পারে না।
১৯৪৬ সালে জন্ম। বি.এস.সি গ্রাজুয়েট। ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর তিনি বিমানবাহিনী থেকে সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন এবং ১৯৭১ সালের এপ্রিল মাস পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত থাকেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের শুরুতেই সুদূর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পালিয়ে এসে যে দলটি সর্ব প্রথম মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেছিল তিনি ছিলেন তাদের একজন। মুক্তিযুদ্ধে অসাধারণ সাহস ও কৃতিত্বের জন্য তিনি বীর উত্তম খেতাবে ভূষিত হন। একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসাবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গড়ে তোলার প্রক্রিয়ায় তার অবদান উল্লেখযোগ্য। শেখ মুজিবের স্বৈর শাসনকালে ১৯৭৪ সালে প্রেসিডেন্সিয়াল অর্ডার নং ৯ (PO-9) এর প্রয়োগে তিনি চাকুরিচ্যুত হন। ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ সালের ঐতিহাসিক বৈপ্লবিক অভ্যুত্থানের পর তাঁকে পুনরায় সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয় এবং লে. কর্নেল পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। ১৯৭৬ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়োজিত হবার পর গণচীনে তাঁকে কূটনীতিক হিসাবে প্রেরণ করা হয়। ১৯৮০ সালে লন্ডনের হাই কমিশনের সাথে তিনি এ্যাটাচড হন। ১৯৮২ সালে কমিশনার হিসাবে হংকং এর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ১৯৮৮ সালে রাষ্ট্রদূত হিসাবে কেনিয়ায় পোস্টেড হন। একই সাথে তাকে তানজানিয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ইউনেপ (UNEP) এবং হেবিটটি (HABITAT)-এ বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। সোমালিয়ায় যুদ্ধকালিন সময়ে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা বাহিনীর অংশ হিসাবে প্রেরিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের সার্বিক তত্ত্বাবধানের বিশেষ দায়িত্বও তিনি পালন করেন। ১৯৯৫ সালে তিনি সরকারি চাকুরি থেকে অবসর লাভ করেন। এরপর দেশে ফিরে নিজস্ব ব্যাবসা শুরু করেন। তিনি বিবাহিত এবং এক কন্যার জনক। তার শখ: বই পড়া, ভ্রমণ, খেলাধুলা এবং সঙ্গীত।