আজই শেষদিন! শেষ হচ্ছে বই ও পণ্যে ৭০% পর্যন্ত ছাড়! বছরের সেরা ডিল, রকমারি ক্লিয়ারেন্স সেল, ২০২৫
ভূমিকা
ইংরেজি মনিকার (সড়হরশবৎ) কথাটার সঠিক বাংলা শব্দ কী আমি জানি না। ডিকশনারি অর্থে কথাটা ‘নিক নেইম’ বা ডাকনামের সমার্থক হলেও ব্যবহারের দিক থেকে মনিকার কথাটার অর্থ একটু ভিন্ন ও বিস্তৃত। এই ‘নিক নেইম’ বা ডাকনামটাও আমরা যেই অর্থে দেশে ডাকনাম কথাটা ব্যবহার করি সে’রকম নয়। যেমন তিনবার ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জেতানো পেলের মনিকার ছিল ‘ব্ল্যাক ডায়মন্ড’ বা ‘কালো মানিক’। এটা পরিবারের দেয়া ডাকনাম ছিল না বরং ফুটবল খেলায় অসাধারণ দক্ষতার জন্যই তাকে দেশে-বিদেশে এই নামে ডাকা হতো। তেমন বক্সিং রিংয়ে অবিশ্বাস্য কীর্তির জন্য মোহাম্মদ আলির মনিকার ছিল "ঞযব এৎবধঃবংঃ"। কিন্তু আমার প্রতিদিনের প্রকাশ্য জীবনের রুটিন কাজকর্মের আড়ালে লুকানো কোনো অপ্রকাশ্য বৈশিষ্ট্য খুঁজে আমার মনিকার গড়ার কোনো ঝামেলাজনক দায় বা দায়িত্ব আমি ঘরের পরের, শত্রু মিত্র কোনো মানুষের জন্যই রাখিনি। তারপরেও ঘরের পরের অনেকের কাছেই আজীবন বহুশ্রুত যে-বিশেষণটা আমার মনিকার হিসেবে ভাবা যেতে পারে তা হলো : ঘরকুনো। ‘মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়’ আপ্ত বাক্য মিথ্যে প্রমাণ করে আমার চিরদিনের ঘরকুনো পরিচয় এখনো বহাল আছে আগের মতোই। ভবিষ্যতে সেটা বদলে যাবার স্ট্যাটিস্টিকেল প্রোবাবিলিটি খুবই কম।
রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করতে করতে একদিন হঠাৎ ঘরকুনো আমি দেশ ছেড়ে সাত সমুদ্দুর আর তেরো নদীর পারে পড়তে এলাম আমেরিকায়। পেনসিলভ্যানিয়া স্টেটের পিটসবার্গের বিখ্যাত কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স প্রোগ্রাম দিয়ে শুরু হয়েছিল আমার দেশের বাইরে পড়াশোনা। তারপর এমবিএ, পিএইচডির জন্য আরো কতগুলো ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সুযোগ হলো। আমেরিকায় শিক্ষকতার সুযোগও হলো। অনেক বছর আমেরিকায় থাকা, কয়েকটা স্টেটের ইউনিভার্সিটিতে পড়া আর পড়ানোর সুবাদে আমেরিকার উল্লেখযোগ্য অনেক কিছুই দেখবার সুযোগ হলো। আমেরিকা দেখার সেই ঘটনাগুলোই এই বইয়ের বিষয়।
চৌকস কোনো লেখকের হাতে আমার আমেরিকার প্রবাসী জীবনের ঘটনাগুলো নিঃসন্দেহে একটা চমৎকার ভ্রমণকাহিনি হতে পারত। আমারও সে’রকম একটা ইচ্ছে ছিল না সেটা নয়। কিন্তু নানা কারণে বুঝি আমার আমেরিকা প্রবাসী জীবনের ঘটনাগুলো আর আকর্ষণীয় ভ্রমণকাহিনি হয়ে উঠেনি। কোনো ভ্রমণ কাহিনিতে স্ট্যাচু অফ লিবার্টি, আধুনিক স্থাপত্য বিস্ময় ক্রাইসলার বা অ্যাম্পায়ার স্টেট্ বিল্ডিং, পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত এয়ারপোর্ট জেএফকে, কার্নেগি মেলন ইউনিভার্সিটি দেখার বিস্ময়ের চেয়েও দেশের মন খারাপ করা আর্থ সামাজিক ও রাজনৈতিক বেহাল অবস্থা, শিক্ষা আর উন্নয়নের লুপহোলগুলো বড়ো হয়ে যাওয়া মানে হলো মানচিত্রে পদ্মা নদীকে যমুনা নদীর চেয়ে বড়ো অথবা বাটালি হিলকে ক্রিওক্রাডংয়ের চেয়ে উঁচু করে দেখাবার মতো। ভূগোল পরীক্ষায় এই রকম গড়বড় করে দেশের নদী, পাহাড় আঁকার জন্য স্কুলে মালেক স্যারের ক্লাসে কড়া শাসনের মুখে পড়তে হয়েছে অনেক অনেকবার। কিন্তু স্কুলের জীবন পেরিয়ে আসার অনেক বছর পরে এই বইয়ে আমেরিকার কিছু অভিজ্ঞতা, সেখানে দেখা পৃথিবীর আধুনিক কিছু বিস্ময়ের কথা বলতে গিয়ে যদি তার সাথে দেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, শিক্ষার বেহাল অবস্থা, সরকারি ভাষ্যের উন্নয়নের লুপহোলগুলো বড়ো হয়ে আঁকা হয়ে যায় তাতে কী-ই বা হবে? মনের ক্যানভাসে আঁকা নিজস্ব ভ্রমণ মানচিত্রে বাটালি হিল ক্রিওক্রাডংয়ের চেয়ে যদি কিছুটা উঁচু হয়েই যায়, যাক না। তাতে কার কী-ই বা ক্ষতি হবে?
তাহলে শুরু করা যাক আমার আমেরিকা প্রবাসী জীবনের হতে পারত ভ্রমণ কাহিনির যে-ঘটনাগুলো স্বদেশের মুখচ্ছবি হয়ে মনে উঁকিঝুঁকি দেয় সবসময় তার গড়বড় বয়ান।
Report incorrect information