কাহলিল জিবরানের গীতিধর্মী গদ্যে রচিত ভাবনা-উদ্দী-পক সুভাষিত বচনের বই 'সৈকত ও সমুদ্র'। মানবজীব-ে নর এক রূপকাত্মক চিরায়ত পটভূমি এই বালি সৈকত ও বিপুল জলধি। জীবনের চিরচলিষ্ণু মুহূর্তসমূহের সারাৎস-ার সহজ কথার স্বল্পতায়, গূঢ় ভাবনার গভীরতায়, দার্শনিক প্রজ্ঞায় ও আধ্যাত্মিক ব্যঞ্জনায় লেবাননিয়-অ্যামেরিকান কবি জিবরান বিধৃত করেছেন তাঁর প্রবাদপ্রতিম ভাবগর্ভঅধ্যাত্ম দর্শনের নীতিকথাসমূহে।
১৯২৬ সালে ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত পারাপারের দর্শনসমৃদ্ধ 'সৈকত এবং সমুদ্র' পরিপক্ব ও পরিণত জিবরানের এক অলোকসামান্য গ্রন্থ। মাত্র ৪৫-পৃষ্ঠার এ-ক্ষুদ্রায়তন পুস্তিকায় জিবরান উপস্থাপন করেছেন জীবনাভিজ্ঞতার পরিদ্রুত প্রজ্ঞাময় নির্যাস। জীবনের প্রাসঙ্গিক সকল অনুষঙ্গ জন্ম-মৃত্যু, নারী-পুরুষ, আনন্দ-বেদনা, স্বর্গ ও সূর্য, সময় ও অপেক্ষা সর্বোপরি স্রষ্টা ও সৃষ্টি সবই আত্মার জ্যোতির্ময় আলোয় উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে এ গ্রন্থের পাতায় পাতায়।
'সৈকত ও সমুদ্র'-ব্যাপী জিবরানের দার্শনিক উক্তি ও বচনের যে বিস্তার তা হৃদয়কে দ্রবীভূত করে, চিন্তাকে করে পরিস্রুত এবং সংবেদী পাঠকমাত্রই অনুপ্রাণিত বোধ করেন নতুন করে ভাবার জন্যে। প্রকৃতপক্ষে, জিবরানের চিন্তার বৈপরীত্য তার দর্শনের গভীরতাকে যে অর্থময়তায় প্রতিষ্ঠিত করে তা অনিবার্যভাবেই পাঠককে আলোড়িত করে। এবং আলোড়িত পাঠকের ভেতর ভাবনার পরিসর তৈরি করার যে ক্ষমতা জিবরান সৃষ্টি করেন তা এক কথায় আধুনিক ও আলোকসঞ্চারী।