চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের পর জনমনে তিনটি প্রশ্ন জাগছে। এক, বিগত সরকারের বেশ কিছু উন্নয়নকর্ম সত্ত্বেও কেন অর্থনীতি সংকটাপন্ন হয়ে পড়ল? দুই, এই অভ্যুত্থানের জন-আকাঙ্ক্ষাগুলো কী? তিন, স্থিতিশীল এক উন্নয়নমুখী অর্থনীতির পথে হাঁটতে হলে কী কী সংস্কার আনা প্রয়োজন? এ বই মূলত এই তিনটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছে। যেকোনো পাঠকের জন্য এই ত্রিমুখী আলোকপাত তথ্য ও যুক্তি দিয়ে সহজ ভাষায় পরিবেশিত হয়েছে। আজকের অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে অর্থনীতির সংস্কারই রাষ্ট্রসংস্কারের ইঞ্জিন এবং সবচেয়ে জরুরি উপাদান, যা এই গ্রন্থের মূল আলাপন রচনা করেছে। এই আলোচনার মন্থনে বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের কোথায় শক্তি আর কোথায় দুর্বলতা, যা এর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
গণতান্ত্রিক অধিকারহীনতা ও আয়বৈষম্য নিয়ে মানুষের অসন্তোষ প্রবল। কোটাবিরোধী আন্দোলন ছিল একটি দিয়াশলাইয়ের কাঠি, যা মূল্যস্ফীতি, বেকারত্ব, রাজনীতির ব্যবসায়ন, আমলাতন্ত্রের গিট্টু, দুর্নীতি, ব্যাংক-লুণ্ঠন ও অর্থপাচারের মতো নানা অনিয়মের দাহ্য পদার্থে শেষতক আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে উঠেছিল গুটিকয়েক অলিগার্কের লুটতরাজের উৎসভূমি— যাদের পেছনে ছিল ক্ষমতাসীন রাজনীতিকদের মদদ ও স্বার্থ। নিম্নমাত্রার রিজার্ভ আর বর্ধিষ্ণু খেলাপি ঋণ এক শঙ্কাজনক মাত্রায় পৌঁছেছিল। গণ-অভ্যুত্থান ছিল মূলত এসব জন-অসন্তোষেরই সম্মিলিত অগ্ন্যুৎপাত। সংস্কার সাধনান্তে রাজনীতি ও অর্থনীতিকে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথে চালিত করাই আজকের কর্মপথ।
বিরূপাক্ষ পাল নিছকই এক জীবনপুরের পথিক। জন্ম ১৯৬৩-এর বসন্তে। ১৯৭১-এ নালিতাবাড়ী থেকে শরণার্থী হয়ে মেঘালয় গেলেন। তখন থেকেই নিসর্গের সান্নিধ্যে পথচলার আনন্দ। মমতাময়ী মায়ের পাশে থেকে পাঠের অভ্যাস। শিক্ষক পিতার প্রেরণায় প্রথম লেখালেখির সূচনা। কনিষ্ঠ ভ্রাতা উৎপলাক্ষের অকাল মৃত্যু তাকে সবচেয়ে বেদনার্ত করে—আবার ক্লান্তিবিহীন এগিয়ে যাবার ডাক দিয়ে যায়।। বর্তমানে বিরূপাক্ষ পাল কোর্টল্যান্ডস্থ নিউ ইয়র্ক রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির স্নাতক বিরূপাক্ষের প্রথম পেশা গৃহশিক্ষকতা, তারপর ব্যাংকিং। আনন্দ পান নি অসৃজনী ব্যাংকিংয়ের ঘানি টানতে। ছেড়ে দিয়ে রাস্তায় নামেন। মুক্ত লেখালেখি, চুক্তিভিত্তিক গবেষণা, শেষতক সাংবাদিকতা। অস্ট্রেলিয়া গিয়ে এই বেকারের আবার পথচলা। সিডনিতে বৎসরাধিক সরকারি চাকরি। এমবিএ শেষ করেন সিডনির প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। আবার ব্যাংকে। ভাল লাগেনি – তাই শিক্ষার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রে গমন দু’হাজার দশকের শুরুতে। নিউ ইয়র্কের বিংহামটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি শেষ করে অধ্যাপনার কাজে এতদিনে থিতু হয়েছেন। মাঝে তিন বছরের জন্য দেশে এসে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অর্থনীতিবিদের কাজ করেছেন। অতিথি শিক্ষক হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ-তে এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়িয়েছেন। বিআইডিএস-এ ভিজিটিং ফেলোও ছিলেন। বিরূপাক্ষ তার স্ত্রী তমা পাল ও তিন সন্তান নিয়ে সংসার পেতেছেন পাহাড়ঘেরা কোর্টল্যান্ড শহরে। অর্থনীতি, বিতর্ক, রম্য ও ভ্রমণ – এ চার বিষয়ে তিনি লিখেন। তার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সহজ কথায় অর্থনীতি, মুক্তবাজার অর্থনীতি, ম্যাক্রোএকোনোমিক পলিসি অ্যান্ড ইনস্টিটিউশন্স ফর গ্রৌথ ইন বাংলাদেশ, বিতর্ক ভুবন, প্রথম বিতর্ক কথা, দ্বন্দ্বসূত্র, মশার জন্য ভালবাসা (রম্য), রম্যলোকের সৌম্যসভা ও সিডনির পথে পথে। তার প্রিয় শখ লেখালেখি, সঙ্গীত ও বক্তৃতা।