সপ্তদশ শতকে জাপানে এই কাব্যধারার শুরু, যদিও শাস্ত্রমতে উনিশ শতকের আগ পর্যন্ত ‘হাইকু’ নামটির উদ্ভব হয়নি। উৎপত্তি থেকে নানাবিধ বিবর্তনের ধারায় জ্যাপনিজ হাইকু মাস্টাররা একে ভেঙেছেন-গড়েছেন। কালের ধারায় অন্যান্য ভাষাভাষী কবিরা একে আত্মীকরণ করেছেন নিজেদের সাহিত্যে। ইংরেজি সাহিত্যে বিশ শতকে ‘ইমেজিস্টদের’ দ্বারা হাইকুর এক প্রভাবশালী ধারা তৈরি হয়েছিল। এজরা পাউন্ড এই ধারার নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিন্তু শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হাইকুর একটি গাঠনিক বৈশিষ্ট্য, যেটিকে এর সকল রচয়িতারাই অক্ষুণ্ন রেখেছেন সেটি হলো--এটি তিন লাইনে রচিত একটি কবিতা। তিন লাইনের এই সংক্ষিপ্ত অবয়বে হাইকু পাঠকের মনে এক প্রবল আলোড়িত প্রভাব ছড়ায়। এইদিক থেকে হাইকুকে কবিতার ছোট গল্প বলা যেতে পারে। শেষ হয়েও এর শেষ হয় না, যায় না এর রেশ। প্রথম দুই লাইনে মানব অনুভবের বা জীবনাচারের কোনো বিশেষ মুহূর্ত আপাতদৃষ্টিতে যা নিছক তুচ্ছও মনে হতে পারে তাকে বাধা হয় চিত্রকল্পের বুননে। এই চিত্রকল্প পাঠকের মননে এক স্বচ্ছ দৃশ্যায়ন তৈরি করে। এই কৌশলকে সফল করতে হাইকুতে নিত্যদিনের
প্রকৃতি, জীবন ও ঋতুবৈচিত্র্যের ছবির সমাহার ঘটান কবি। অতি সাধারণ দুটো লাইন তৃতীয় লাইনে এসে পাঠককে এক ধাক্কায় নিয়ে যায় কোনো অসীমের অনুভবে। এ যেন সম্পর্কহীন, তবুও নিবিড় কোনো সম্পর্ক--একটা সহজাত বোধ, একটা চিরায়ত অনুভূতি। সহজপাঠ্য এই তিন লাইনের কবিতা শেষ করা যায় এক লহমায়। এতে ভারিক্কি ভাব নেই, তবে দর্শন তো আছেই।