হে মহান বাদশা! আমরা ছিলাম মূর্খতা ও বর্বরতায় অভ্যস্ত এক জাতি। আমরা মূর্তি পূজা করতাম, মরা -পচা খেতাম, অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ করে বেড়াতাম, রক্তের সম্পর্কও বিনষ্ট করতাম, প্রতিবেশীর ক্ষতি করতাম, আমাদের সবলেরা দুর্বলদের গ্রাস করতাম।এসবই ছিলো আমাদের আগের ধর্ম -কর্ম। অনন্তর আল্লাহ আমাদের মাঝে একজন রাসূল প্রেরণ করলেন,যার জাত বংশ আমাদের চেনা, যার সততা ও বিশ্বস্ততা সবার জানা, যার চরিত্রের শুদ্ধতা সম্পর্কে আমরা আশ্বস্ত। তিনি আমাদের ডাকলেন আল্লাহর প্রতি -আমরা যেনো আল্লাহকে এক মানি,তাঁর উপাসনা করি,আমরা এবং আমাদের পূর্বপরুষেরা আল্লাহকে ছেড়ে যেসব পাথর ও মূর্তির উপাসনা করতাম তা যেন আমরা ছেড়ে দেই। সাথে সাথে তিনি আমাদেরকে সত্যবাদিতার হুকুম করলেন, আমানত ফিরিয়ে দেওয়া, আত্মীয়তা রক্ষা করা এবং প্রতিবেশীর কল্যাণ কামনার আদেশ দিলেন, নিষিদ্ধ কাজ এবং রক্তপাত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিলেন। বেহায়াপনা ও বেলাল্লাপনা থেকে নিষেধ করলেন, মিথ্যা বলা, এতিম -অসহায়ের মাল লুটে নেওয়া এবং সতী নারীর উপর অপবাদ দেওয়া থেকে বারণ করলেন। আদেশ করলেন, আমরা যেন কেবল এক আল্লাহর ইবাদত করি তার সঙ্গে কাউকে শরিক না করি। আমাদেরকে নামাজ, যাকাত ও রোজা আদায়ের হুকুম করলেন। আমরা তাকে সত্যায়ন করলাম, তাঁর আনীত সকল বিষয়ে আমরা তাঁর অনুসরণ করলাম । তাই আমরা কেবল এক আল্লাহর ইবাদত করি, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করি না। তিনি আমাদের উপর যা হারাম করেছেন তাকে আমরা হারাম জানি,যা কিছু হালাল করেছেন তাকে আমরা হালাল মানি।
মুহাম্মদ মনজুর নোমানী (১৫ ডিসেম্বর ১৯০৫ – মে ১৯৯৭) ছিলেন একজন ভারতীয় দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত। তার লিখিত রচনাগুলির মধ্যে প্রসিদ্ধ হলো, মাআরেফুল হাদিস, ইসলাম কেয়া হায়। তিনি ১৯২৭ সালে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে স্নাতক হন। সেখানে তিনি আনোয়ার শাহ কাশ্মীরির অধীনে হাদীস অধ্যয়ন করেন। তিনি চার বছর দারুল উলূম নদওয়াতুল উলামায় শায়খুল হাদিসের পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন এবং আবুল হাসান আলী নদভীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন। ১৯৪১ সালে জামায়াতে ইসলামির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে তিনি এই দলের উপ-আমির নির্বাচিত হন। তিনি আবুল আলা মওদূদীর দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। ১৯৪২ সালে মওদুদীর সাথে মতবিরোধের পরে তিনি সংগঠন থেকে পদত্যাগ করেন। এরপরে তিনি মুহাম্মদ ইলিয়াস কান্ধলভির তাবলীগী জামায়াতে যুক্ত হন। তিনি দারুল উলূম দেওবন্দের মজলিসে শূরা ও মজলিসে আমিলাহ (কার্যনির্বাহী পরিষদ)-এ দায়িত্ব পালন করেছিলেন এবং মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগের সদস্য ছিলেন। ১৮ শাওয়াল ১৩৩৩ হিজরীতে ব্রিটিশ ভারতের সংযুক্ত প্রদেশের সামভালে জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁর বাবা সুফি মুহাম্মদ হোসেন ছিলেন একজন মধ্যবিত্ত ধনী ব্যবসায়ী এবং জমিদার। মনজুর নোমানী নিজশহর সামভালে সিরাজুল উলুম হিলালী সারাই মাদরাসায় প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেছেন । পরে তিনি আজমগড়ের দারুল উলূম মাউতে পড়াশোনা করেছেন। অবশেষে তিনি দারুল উলূম দেওবন্দে ভর্তি হন যেখানে তিনি দুই বছর অবস্থান করেন এবং দাওরা হাদিসের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে ফারেগ হন । দারুল উলূম দেওবন্দে তাঁর শিক্ষকদের মধ্যে ছিলেন আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি , মুফতি আজিজুর রহমান এবং সিরাজ আহমদ রশিদী ।