জগদ্বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ড. ইউসুফ কারযাভি রচিত “আল-ইসলাম ওয়াল-ইলমানিয়াহ ওয়াজহান লি-ওয়াজহিন” বইটি জ্ঞানভিত্তিক গভীর আলালচারিতার দলিল। এখানে লেখক অত্যন্ত দক্ষতা ও নিপুণতার সাথে ইসলাম ও ধর্মনিরপেক্ষতার মাঝে বিরোধগুলো তুলে ধরেছেন এবং সেগুলোর ভিত্তি ও প্রাসঙ্গিকতা বিশ্লেষণ করেছেন।
বইটির মূল আলোচনা শুরু হয় উভয় পক্ষের অবস্থান, পরিচিতি এবং মৌলিক ধারণাগুলো স্পষ্ট করার মাধ্যমে। লেখক দ্বন্দ্বের স্থানগুলো চিহ্নিত করেছেন এবং পার্থক্যগুলো নিয়ে গঠনমূলক আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি, তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষ থেকে উত্থাপিত বিভিন্ন আপত্তি ও সংশয়ের যুক্তিসঙ্গত খণ্ডন করেছেন।
এই বইয়ের একটি প্রধান লক্ষ্য, সত্য উদঘাটন করা এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রচারকরা মানুষের মাঝে যে সন্দেহের বীজ বপন করার চেষ্টা করেন, তার গোমর ফাঁস করা। তাদের হীন উদ্দেশ্য ও অসৎ কার্যকলাপ উন্মোচন করা। লেখক প্রমাণ করেছেন যে, ইসলামি বিশ্বে ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য কোনো স্থান নেই।
দারুণ ব্যাপার হল, নন্দিত গদ্যকার “মানবতার দেওয়াল” উপন্যাসের রচয়িতা নাবিল হায়দার এই বইটির অনুবাদ করেছেন। তার সাবলীল অনুবাদ পাঠককে সৃজনশীল বইয়ের স্বাদ দেবে— তা সহজেই অনুমেয়।
এই বইটি থাকতে পারে ইসলামি চিন্তাবিদ, শিক্ষার্থী এবং ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে জানতে আগ্রহী—প্রত্যেকের টেবিলে। ড. কারযাভির গবেষণাধর্মী এবং যুক্তিনিষ্ঠ লেখনীর কারণে বইটি পাঠকের চিন্তার গভীরে প্রবেশ করতে সক্ষম।
শায়খ প্রফেসর ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল কারযাভি (১৯২৬-) মিশরীয় বংশোদ্ভূত একজন প্রভাবশালী আধুনিক ইসলামি তাত্ত্বিক ও আইনজ্ঞ। তিনি মুসলিম ধর্মতত্ত্বিকদের অভিজাত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলার্সে (International Union of Muslim scholars)-এর সাবেক চেয়ারম্যান। জন্ম ১৯২৬ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর। মিসরের উত্তর নীলনদের তীরবর্তী সাফাত তোরাব গ্রামে। দুই বছর বয়সে বাবা ইন্তিকাল করলে চাচা তার লালন-পালন করেন। দশ বছর বয়সে তিনি সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ করেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা করেন আল-আজহার কারিকুলামে। প্রাচীন ইসলামী বিদ্যাপীঠ আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উসুলুদ দ্বীন অনুষদ থেকে অনার্স, আরবি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। মিসরের ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘Institute of Imams’ এর পরিদর্শক হিসেবে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। কিছুদিন তিনি আওকাফ মন্ত্রণালয়ের ‘Board of Religious Affairs’ এ কর্মরত ছিলেন। ১৯৭৭ সালে তিনি কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘শরীয়াহ এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ অনুষদের প্রতিষ্ঠাকালীন ডীন নিযুক্ত হন। ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি এখানে কর্মরত থাকেন এবং একই বছর তাঁর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্র’। ১৯৯০-৯১ সালে আলজেরিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের Scientific Council এর চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯২ সালে কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সীরাত ও সুন্নাহ গবেষণা কেন্দ্রের ডিরেক্টর হিসেবে পুনরায় কাতার ফিরে আসেন। তিনি জর্ডানের রয়্যাল অ্যাকাডেমি ফর ইসলামিক কালচারাল অ্যান্ড রিচার্জ (Royal academy for Islamic culture and research), ইসলামি সম্মেলন সংস্থা (OIC), রাবেতা আল-আলম আল-ইসলামি এবং ইসলামিক স্টাডিজ সেন্টার, অক্সফোর্ড এর সম্মানিত সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৪১১ হিজরিতে ইসলামী অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ব্যাংক ফয়সল পুরষ্কার লাভ করেন। ইসলামি শিক্ষায় অবদানের জন্য ১৪১৩ হিজরিতে মুসলিম বিশ্বের নোবেল খ্যাত কিং ফয়সাল অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন । ১৯৯৭ সালে ব্রুনাই সরকার তাকে ‘হাসান বাকলি’ পুরষ্কারে ভূষিত করে।