কায়রো ট্রিলজি' নাগিব মাহফুজের সেরা সাহিত্যকর্ম হিসেবে বিবেচিত। আধুনিক আরবিসাহিত্যে 'কায়রো ট্রিলজি' প্রথম পারিবারিক কাহিনি। ট্রিলজি লেখক নাগিব মাহফুজের একান্ত নিজস্ব দিকনির্দেশনার অনুসন্ধান, ব্যক্তিগত, চেতনা ও ইতিহাস তুলে ধরারই প্রচেষ্টার প্রতিফলন। এটি আধুনিক মিসরের রাজনৈতিক ও সামাজিক রূপান্তরের বর্ণনামূলক রেকর্ড, যেখানে জাতীয় পরিচিতি এবং আধুনিক বিশ্বে মিসরের অবস্থান খোঁজা হয়েছে। এছাড়া এতে সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের দৃশ্য সুনিপুণভাবে অঙ্কন করার পাশাপাশি মানুষের সম্পর্কের সকল দিক তুলে আনার চেষ্টাও লক্ষণীয়। সামাজিক ইতিহাস ও সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্বের মূল্যবান দলিল ছাড়াও 'দ্য কায়রো ট্রিলজি'র সাহিত্যমান অনন্যসাধারণ।
উপন্যাসটিতে কায়রোর একটি পিতৃতান্ত্রিক পরিবারের মধ্যবিত্ত নৈতিকতা ও সাংস্কৃতিক চেতনাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। একটি মিসরীয় পরিবারকে উপন্যাসের কেন্দ্রে রেখে পরিবারটির তিন প্রজন্মের উত্থান পতনের খুঁটিনাটির বিবরণ আধুনিক আরবিসাহিত্যে একটি নতুন ধারার সৃষ্টি করেছে।
ট্রিলজির কাহিনিকাল দীর্ঘ, মিসরের আধুনিক ইতিহাসের চূড়ান্ত গতি নির্ণয়ের যুগকে ধারণ করেছে- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে অটোমান শাসনের অবসানের লক্ষ্যে বোমাবর্ষণ এবং ১৯১৯ সালে সূচিত জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের চূড়ান্ত একটি পর্যায় 'প্যালেস ওয়াক'-এর উপজীব্য। 'প্যালেস অব ডিজায়ার' এর কাহিনি শুরু হয়েছে পাঁচ বছর পর ১৯২৪ সালে জাতীয়তাবাদী ওয়াফদ পার্টির নেতা সাদ জগলুল পাশার সাথে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের আলোচনার মধ্য দিয়ে এবং শেষ হয়েছে ১৯২৭ সালে তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।
(আরবি: نجيب محفوظ) (জন্ম: ডিসেম্বর ১১, ১৯১১ - মৃত্যু: আগস্ট ৩০, ২০০৬) নোবেল বিজয়ী মিশরীয় সাহিত্যিক। নাগিব মাহফুজ মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি মিশরীয় বিপ্লবে ১৯১৯ অংশ গ্রহণ করেন। তার মাধ্যমিক পরীক্ষার পরে, তিনি দর্শন বিভাগে ১৯৩০ সালে ভর্তি হন মিশরীয় বিশ্ববিদ্যালয় (বর্তমানে কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়)। ১৯৩৪সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন জরেন। এর পর ১৯৩৬ সালে দর্শনের গবেষণা কাজে একটি বছর অতিবাহিত করেন। পরে তিনি গবেষনা পরিত্যাগ করেন এবং একটি পেশাদার লেখক হয়ে যান। মাহফুজ তারপর আল-রিসালায়ের জন্য একজন সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেন, এবং এল-হিলাল এবং আল-আহরাম ছোটোগল্প লিখতে অবদান রাখেন। নাগিব মাহফুজ ১৭ বছর বয়স থেকে লেখালেখি শুরু করেন। ১৯৩৯ সালে তার প্রথম উপন্যাস প্রকাশিত হয়। জীবদ্দশায় ৩০টি উপন্যাস লিখেলও ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৭ সালের মধ্যে প্রকাশিত কায়েরা ট্রিলজি তাঁকে আরব সাহিত্যের এক অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেন। এতে তিনি ইংরেজ শাসন থেকেমুক্ত হওয়ার সময়কালে মিশরের ঐতিহ্যবাহী শহুরে জীবনধারা ফুটিয়ে তোলেন । এ উপন্যাসের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি ১৯৮৮ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। নাগিব মাহফুজের উপন্যাসের প্রায় অর্ধেকেরও বেশীর চলচ্চিত্রায়ন হয়েছে। উপন্যাসের পাশাপাশি তিনি ১০০ টিরও বেশি ছোটগল্প রচনা করেছেন। এগুলির বেশীর ভাগই পরে ইংরেজিতে অনুদিত হয়েছে।