উপন্যাসের নায়িকা অবন্তী অতি সাধারণ দেখতে। কিন্তু তার ব্যক্তিত্ব চোখে পড়ার মতো। কলকাতার নিকটবর্তী মফস্সলে বড়ো হয়েছে অবন্তী। প্রগতিশীল ও সংস্কৃতিমনস্ক বাবার প্রভাবে সে আজ কলকাতার এক মাঝারি নাট্যদলের নিয়মিত অভিনয়- শিল্পী এবং সরকারি কর্মচারী।
অবন্তী বিয়ে করল খানিকটা আবেগতাড়িত হয়ে। সৈকত শিক্ষা, দীক্ষা এবং বংশ পরিচয়ে অবন্তীর সমকক্ষ নয়। এভাবে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে আছে পাড়ার সবচেয়ে সুদর্শন ও লেখাপড়ায় ভালো মল্লারদা। অবন্তীর কিশোরবেলার প্রেম। মল্লারদা উচ্চশিক্ষার কারণে দূরে চলে গিয়েছিল। ফিরে যখন এল, অবন্তীকে ভুলে গেছে সে। অন্য মেয়ের সঙ্গে বিবাহের দিন স্থির হয়ে গেছে তার। ভেঙে পড়ল অবন্তী। হয়তো বা মল্লারদাকে দেখাতেই তড়িঘড়ি বিয়ে করল তার নাট্যদলে আসা নতুন সদস্য সৈকতকে। তাতে চূড়ান্তভাবে ঠকল সে। নির্মম এবং মারাত্মকভাবে ঠকে যাওয়াটা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল সৈকতেরই বন্ধু এবং ওদের পাড়ার ছেলে দীপ্তমান। ছেলেটি খুবই মেধাবী এবং আলাভুলো টাইপের। দীপ্তমানের দাবি অবন্তী তার চেনা, তবে কোথায় দেখা হয়েছে মনে করতে পারছে না। চেনা বলেই অবন্তীর উপকার করতে চাইছে সে। অবন্তী কিন্তু মনে করতে পারে না দীপ্তমানকে। অবন্তী ফিরে আসে বাপের বাড়িতে। অফিসের কলিগ চন্দন তখন তার ভাঙা মনের আশ্রয়। চন্দনও ধোঁকা দেয় অবন্তীকে। ঠকে যাওয়ার স্মারক নিয়ে অবন্তী বাবার বাড়ি ছেড়ে একা ভাড়াবাড়িতে থাকতে শুরু করে। দীপ্তমান তার পিছু ছাড়ে না। অবস্তীর সকল কষ্টের পাশে এসে সে দাঁড়ায়। অবন্তী নিশ্চিত দীপ্তমান আগে কখনো তাকে দেখেনি। কোনো পূর্ব-পরিচয় ছিল না। তাহলে কি অবন্তী তার মানস-প্রেমিকা? অবন্তীর মতো এত সাধারণ দেখতে মেয়ে কারও মানস-প্রেমিকা হয় কী করে!
সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্ম ২১ জানুয়ারি ১৯৬১, হুগলি জেলার উত্তরপাড়ায়। অদ্যাবধি উত্তরপাড়ার পৈতৃক বাড়িতে বসবাস। পিতা সাহিত্যসেবী। লেখা শুরু আঠারো-উনিশ বছর বয়সে। সে সময় দু-তিনটি গল্প স্থানীয় লিটল ম্যাগাজিনে ছাপা হয়েছিল। তারপর দীর্ঘ বিরতি। বারো বছর পর (১৯৯৪) আবার একটি গল্প লিখে সরাসরি দেশ পত্রিকায় পাঠিয়ে দেন। একসারি নবীন গল্পকারদের সঙ্গে গল্পটি ছাপা হয়। পরিচয় হয় বিরাট পাঠককুলের সঙ্গে। বিগত চার বছর ধরে নামী-অনামী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লিখে যাচ্ছেন। প্রথাগত শিক্ষা স্নাতক পর্যন্ত। এ ছাড়া ফটোগ্রাফি নিয়ে পড়াশোনা। অল্পবয়স থেকে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত থেকেছেন। এখন একটি ফটোপ্রিন্টিং সংস্থায় কর্মরত। প্রথম উপন্যাস ‘প্রত্নকন্যা'। মল্লারপুর’ ১৯৯৯ সালের স্নোসেম-আনন্দ দুর্গোৎসব অর্ঘ্য-এ শ্রেষ্ঠ উপন্যাস হিসেবে পুরস্কৃত হয়। এ ছাড়াও ১৯৯৭ সালে পেয়েছেন গল্পমেলা পুরস্কার।