রেনেসাঁস-আন্দোলন রাজনৈতিক আন্দোলন নয়, এমনকি সামাজিক আন্দোলনও নয়। এটি একান্তভাবেই সাংস্কৃতিক আন্দোলন; সংস্কৃতির ক্ষেত্রেই রেনেসাঁস-আন্দোলনের ক্রিয়াকলাপ প্রত্যক্ষ করা যায়। এর রাজনৈতিক অথবা সামাজিক সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে; তবে সেটা মুখ্যভাবে নয়। রেনেসাঁসের অর্থই হলো পরিবর্তন। এই পরিবর্তন ধীরেই হোক কিংবা দ্রুতই হোক জনগণকে তা মেনে নিতে হবে। মেনে নেওয়ার মধ্যেই রেনেসাঁসের সার্থকতা। রেনেসাঁস গ্রহণও করে আবার বর্জনও করে। শিক্ষা, সংস্কৃতি, মানব- সেবা ইত্যাদির ভাবাদর্শ গ্রহণ করে; অপরপক্ষে, সামাজিক কুসংস্কার-কুপ্রথা ইত্যাদি বর্জন করে। গ্রহণ ও বর্জনের মধ্য দিয়েই রেনেসাঁস অগ্রসর হয়। রেনেসাঁসের একটি বৈশিষ্ট্য ছিল বিদেশী ভাষার প্রতি অনুরাগ। দেশে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি ভাষার প্রচলন হয় এবং পরপরেই এর দ্রুত বিস্তার ঘটে। এদেশের বিশেষ করে কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে বহু ইংরেজি-বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। এ সমস্ত বিদ্যালয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় স্থাপিত হতো এবং প্রতিষ্ঠাতা নিজেই বিদ্যালয় পরিচালনা করতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার রেনেসাঁস বাংলার ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ গৌরবময় ঘটনা। গৌরবময় ঘটনা বলেই রেনেসাঁস ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে। বাংলার রেনেসাঁস বাংলার অগ্রসরতার নব দিক উন্মোচন করেছে। বাংলার রেনেসাঁসের প্রভাব ও আদর্শ কোন দিনই শেষ হওয়ার নয়। বাংলার রেনেসাঁস বাঙালি জাতিকে চিরদিনই অনুপ্রাণিত করবে।