পাপে মৃত্যু
জাকির খান মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন হয়ে পরের সম্পত্তি দখল করে একসময় সমাজের কিং হয়ে যান। বিত্তবান-অভিজাত পরিবারের অনেকেরই সম্পদ লুট করতে কোনো দ্বিধাবোধ করে না। শুধু এক জাকির খান নয়, সমাজে আরও অনেক জাকির খান রয়েছে যারা আজ বিত্তবান। তাদের বিত্তবান হওয়ার পেছনে থাকে এক এক বিরাট বটবৃক্ষ।
বটবৃক্ষরা চিরকাল রয়ে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। কোনটা পাপ, কোনটা পূণ্য তা বিচার করার সময় কোথায় তাদের? পাপী যা কিছু করে যাচ্ছে, সে মনে করে, এ-তো পূণ্যের কাজ, এ তো গর্বের কাজ। খুন, ধর্ষণ সবই করে যায় জাকির খানরা-তাদের ঠেকাবে যারা তারা তো পাপীদের পকেটভুক্ত।
কেননা, টাকা দেখলেই তাদের জিহবা থেকে লালা ঝরে পড়ে। জাকির খানরা আবার সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন, যে জন্য শহর-গ্রামের স্বপনবাবু, কেতকী, বিষ্ণু, কৃষ্ণরা নির্যাতিত হয়, আবার অনেকে বাস্তুভিটা হারিয়ে কিংবা ধর্ষিতা হয়ে সীমান্ত পেরিয়ে চলে যায়। যে দেশে তারা চিরতরে চলে গেল, সে দেশের চিকিৎসকরা পার্শ্ববর্তী দেশের সাম্প্রদায়িক মনোভাপন্ন জাকির খান ও তাদের মা-বোনরা যখন দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে তাঁদের শরণাপন্ন হন তখন চিকিৎসক তাঁর সঠিক দায়িত্বটি পালন করেন। সুচিকিৎসা পাওয়ার আশায় আজ দলে দলে কৃষ্ণদের দেশের চিকিৎসকদের সুচিকিৎসা পাওয়ার আশায় ছোটে।
সেই দেশেতেই , যে দেশে আজ বসবাস করে পূর্ববঙ্গের কোটি কোটি বাঙালি। আর তাঁদেরই বহু নিকটজন গণহত্যার শিকার হয়েছিল সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় । একদিন জাকির খানের বোন রোকেয়া গুরুতর অসুস্থ হলে তাঁকে চেন্নাইতে পাঠানো হলো। চিকিৎসক শ্রীসত্যরঞ্জনের অবারিত সেবা পেয়ে সুস্থ হয়ে ওঠে রোকেয়া - ডাক্তারের প্রেমে পড়ে যায়। অথচ একদিন ডাক্তারের বড়ো বোন সুপ্রিয়া পূর্ববঙ্গে থাকাকালীন সময়ে ধর্ষিতা হয়েছিল।
সত্যরঞ্জন মনে করে, পাপ যে করে সে তো পাপী - যে মানুষটি পাপ করে সেই পাপী মারা গেলে একজন পাপীর মৃত্যু হয় মাত্র। কিন্তু কোটি কোটি মানুষ পাপ বহন করে চলাফেরা করছে সমাজে । পাপীর মৃত্যু হলে একজন পাপীর সংখ্যা কমে মাত্র। কিন্তু যারা বেঁচে থাকে, তারা পাপ করে যায়-তাই সমাজ থেকে পাপের মৃত্যু হয় না। এরকমই একটি ঘটনা ফুটে উঠেছে 'পাপের মৃত্যু' উপন্যাসটিতে।