Category:চিরায়ত কাব্য
কাব্য সম্পর্কে ইংরেজিতে ‘ইমাজিনেশন’ শব্দটি প্রচলিত আছে। এর বাংলা কি?-যে কবির কল্পনাপ্রতিভা আছে সে ছাড়া আর কেউ কাব্য। সৃষ্টি করবার মতো অন্তঃপ্রেরণার দাবি করতে পারি কি? এবং এ প্রেরণা ছাড়া শ্রেষ্ঠ কবিতা লেখা কি করে সম্ভব হতে পারে? আজথেকে পঞ্চাশ বছর আগে, ২৬শে ডিসেম্বর ১৯৪৫ শালে, বরিশাল ‘সর্বানন্দ ভবনে বসে কবি ‘দুর্বোধ্য’ বলে সর্বাধিক নিন্দিত, এই দুটি কবিতাগ্রন্থ তার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। দেখা যায় : প্রকৃত কবিতার তথা কবির এমন—এক মারাত্মক আকর্ষ আছে, যা পাঠককে বোধ্য-অবোধ্যের অতীত এক গহন চুম্বক-টানে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। জীবনানন্দের মৃত্যুত্তর প্রকাশিত “রূপসী বাংলা” মায়াবীর মতো জাদুবলে পাঠকচিত্তকে অধিকার করে প্রকাশের সঙ্গে-সঙ্গে। ১৯৫৪ শালের ২২শে অক্টোবর জীবনানন্দের আকস্মিক অকালমৃত্যুর পরে সর্বত্র যে-উচ্ছ্বাস দেখা দিয়েছিলো, এমনকি জীবনানন্দ-অনীহ সমকালীন প্রধান কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্তও (১৯০১-৬০) যেভাবে বিচলিত হয়েছিলেন, যেন তারই জের থাকতে-থাকতে“রূপসী বাংলা”র সনেটগুচ্ছ বাঙালি পাঠককে। একেবারে কিনে নিয়েছিলো। এবং সেই আকৃষ্যমাণতা এক চূড়ায় ওঠে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় – আর-কোনো আধুনিক কবি নন, ‘দুর্বোধ্য কবি জীবনানন্দ দাশের “রূপসী বাংলা”-ই এদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের অমোঘ এক হাতিয়ার হয়ে ওঠে : ১৯৭১এ বইটির দুটি সংস্করণ প্রকাশিত হয় পর-পর। আমার কাছে “রূপসী বাংলা”র যে- সংস্করণটি আছে সেটা সিগনেট প্রেসের অষ্টম সংস্করণ, বেরিয়েছিলো ফাল্গুন ১৩৭৯তে। অন্তর্বর্তী কুড়ি বছরে নিশ্চিতভাবে আরো অনেকগুলি সংস্করণ হয়েছে। আর বাংলাদেশ থেকে এই বইএর কতো-যে সংস্করণ বেরিয়েছে নামী-অনামীবেনামী প্রকাশভবন থেকে তার লেখাজোখা নেই। তার মানে অবশ্য এই নয় যে, “রূপসী বাংলা” কাব্য হিশেবে সমালোচকদের চোখে অবিসংবাদিতভাবে সমুত্তীর্ণ। “রূপসী বাংলা”র পক্ষ-বিপক্ষ দুরকম সমালোচনাই আমরা দেখতে পাই।
Report incorrect information