প্রথম পর্বের এই কবিতাগুলিতে যুগ-যন্ত্রণা ক্লিষ্ট কবি চিরন্তন আদর্শ ও মূল্যবােধ সম্পর্কে সংশয়ী। সমাজবদ্ধ মানুষের পারস্পরিক প্রীতি, প্রেম-ভালবাসা বা ঈশ্বর-বিশ্বাস—ইত্যাদির প্রতি তাঁর আস্থা তখন বিনষ্ট। তাই এলিয়টের মতাে তার কবিতাতেও উঠে আসে 'চোারাবালি, 'ফণীমনসা' ইত্যাদি প্রতীক। যেমন—
”'চোরাবালি ডাকি দূর-দিগন্তে কোথায় পুরুষকার।'
'চোরাবালি' কাব্যগ্রন্থের ‘ঘােড়সওয়ার’ কবিতাটি বিষ্ণু দে-র কবিমানসের এক প্রতিনিধি স্থানীয় কবিতা। চোরাবালির চিত্রকল্পে কবির ব্যক্তিগত শূন্যতাবােধ ও যুগগত অসহায়তা ব্যঞ্জিত। কিন্তু যুগগত যন্ত্রণা বিষ্ণু দে-কে কর্মহীন উদ্যোগহীন নৈরাশ্যের দিকে ঠেলে দেয় না। অস্তিবাদী কবি এই নৈরাজ্যময় বন্ধ্যাভূমি থেকে কামনার আবেগতপ্ত ভূমিতে উত্তরণের তীব্র আর্তি ব্যক্ত করেন, প্রবল এক ঘােড়সওয়ারকে আহ্বান করে—
”'চোরাবালি ডাকি দূর দিগন্তে
কোথায় পুরুষকার ?
হে প্রিয় আমার, প্রিয়তম মাের!
আয়ােজন কাপে কামনার ঘোর
অঙ্গে আমার দেবে না অঙ্গীকার?'