3 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
TK. 650TK. 559 You Save TK. 91 (14%)
Related Products
Product Specification & Summary
বাংলাদেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম। আর বাংলাদেশের মঙ্গোলীয় রক্তধারার ১৩টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরই বসবাস এই পার্বত্য চট্টগ্রামে। মারমা জনগোষ্ঠী তাদের অন্যতম। মারমারা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সংখ্যালঘু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী। এদের অধিকাংশ পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলায় এবং বাকিরা রাঙামটি ও খাগড়াছড়ি জেলায় বসবাস করে। পার্বত্যবাসী মারমা এবং বাংলাদেশের কক্সবাজার, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার সমতলে বসবাসকারী রাখাইনদের মাঝে মৌলিক কোনো তফাত নেই; ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম, পোশাক-পরিচ্ছদ, পালা-পার্বণ-উৎসব, গৃহ-কাঠামো, খাদ্যগ্রহণ ও বিবাহপদ্ধতি এক ও অভিন্ন। এমনকি এই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেক কাল থেকে আন্তঃবিবাহ [endogamous] চলমান।
মারমা ও রাখাইনরা যুদ্ধে বিধ্বস্ত বর্মা থেকে বাংলাদেশে আগত অভিবাসী। মারমা ও রাখাইনদের সভ্যতার ইতিহাস প্রাচীন। ‘মারমা’ কিংবা ‘ম্রাইমা’ নামের একটি জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব প্রাচীনকালেও ছিল; এর প্রমাণ মেলে বিভিন্ন তথ্য-সূত্রে।
এই দুই জনগোষ্ঠীই এক সময় বাঙালিদের কাছে ‘মগ’ নামে অভিহিত হলেও এরা এই শব্দকে গালি হিসেবে গণ্য করে এবং নিজেদের ‘মগ’পরিচয় দিতে খুবই ঘৃণা ও অপছন্দ করে।
এই দুই জনগোষ্ঠীরই আদি আবাসভূমি হিসেবে রাখাইনরা মনে করে তাদের আগমন ঘটেছে স্বাধীন রাখাইন-প্রে বা আরাকান থেকে, যা এখন মিয়ানমারের অন্তর্গত রাখাইন স্টেট। অপরদিকে মারমারা মনে করে তারা বর্মা থেকে আগত বর্মী রাজের উত্তরাধিকার। কিন্তু একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী বিশেষ একটি রাজপরিবারের উত্তরসূরি কীভাবে হয় তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ও মতভেদ পরিলক্ষিত।
মারমারা অন্যান্য পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মতোই পাহাড়ের ঢালে মাচা পেতে ঘর বাঁধে। এবং সম্পূর্ণ আদিম ও প্রাচীন জুম পদ্ধতির চাষাবাদের ওপর তাদের উৎপাদন নির্ভরশীল। মূলত ধান, রবিশস্য, শাকসবজি, অর্থকরী ফসল তুলা ও বর্তমানে নানা ফল-ফলাদি তারা তাদের জুমে উৎপন্ন করে।
রাখাইনদের মতো মারমাদের ভাষাও ভোট-ব্রহ্ম, যা বর্মী ভাষা রূপে পরিগণিত। প্রাচীন এই ভাষা খুবই সমৃদ্ধ। বর্তমানে এরা বৌদ্ধমন্দির কেন্দ্রিক পাঠশালায় শিশুদের বর্মী বর্ণমালায় এই ভাষার পাঠদান করে আসছে।
মারমাদের বিয়ে অত্যন্ত বর্ণাঢ্য ও নানা আনুষ্ঠানিকতায় পূর্ণ। সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রাপ্তিতে মারমা ও রাখাইন সমাজে পুত্র ও পুত্রী সমান অংশীদারিত্ব হয়। মারমারা ধর্মে বৌদ্ধ হলেও তারা বৌদ্ধধর্মীয় শাস্ত্রীয় নিয়মাচার অনেকাংশেই মানে না। তাদের মাঝে অনগ্রসর সমাজের নানা লৌকিকতা বিরাজমান। মারমারা উৎসব প্রিয় জাতি। বারো মাসে তেরো পার্বণ তাদের লেগেই থাকে।
সম্পাদিত এই গ্রন্থে মারমা জাতিসত্তার নানা প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। আশা করা যায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসমূহসহ বাঙালি পাঠকদের কাছে এই গ্রন্থ ভালো লাগবে।