দীনবন্ধু মিত্রের 'সধবার একাদশী' নাটকের যে সটীক সংস্করণ (জন্মাষ্টমী, ১৩৮৮-১৯৮১ খ্রীঃ) আমি ইতিপূর্বে প্রকাশ করেছি, তাতে পাঠকবর্গের কাছ থেকে আমি বিশেষ সাড়া পাই। এখন ওই বইয়ের ধাঁচেই 'নীলদর্পণ' নাটকের সটাক সংস্করণ ছাপলাম।
ওই বইয়ের ধাঁচেই বললাম বটে, কিন্তু সর্বাংশেই 'নীলদর্পণ' 'সধবার একাদশী'র ধাঁচের অনুসরণ নয়। সমালোচনা ও সম্পাদনা-উভয় দিক থেকেই এটি পূর্বেরটি থেকে ঈষৎ ভিন্ন। 'নীলদর্পণে'র প্রতি পৃষ্ঠাতেই বিস্তৃত ও বিশদ পাদটীকা প্রদত্ত হয়েছে; সেই পাল্টাকা নিছক শব্দার্থ নয়।
প্রতিটি সংলাপের, নাট্যনির্দেশনা ও উপস্থাপনার বিশেষত্ব-বৈশিষ্ট্যগুলির ওপর বিস্তৃত আলোকপাত করেছি এবং সে আলোচনা সমগ্র নাটকটির পরিণতিকে সম্মুখে রেখে করেছি।
সমালোচনার ক্ষেত্রে Neo-criticism-এ বিশ্বাসী।
সে দৃষ্টিকোণ থেকেই পাদটীকা রচনা এবং 'ভূমিকা'র আলোচনা করেছি। বাঙলা সাহিত্যে সমালোচনা সাধারণভাবে এখনও genre-criticism-এর অনুসারী। কোনো বিশেষ তত্ত্ব বা বিশিষ্ট রীতি-পদ্ধতির অনুগত দষ্টিকোণের প্রবর্তন বাঙলা সমালোচনা সাহিত্যে এখনও অপেক্ষিত।
এই বিশেষ সমালোচনারীতির অনুসরণের ফলে 'নীলদর্পণে'র একটি নতুন অর্থ আমার কাছে প্রতিভাত হয়, সেটাই এখানে আমার সাধ্যমত তুলে ধরেছি; এবং, পুনশ্চ, সেই কারণেই, পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠিত সকল সমালোচকদের সঙ্গে আমার মতানৈক্য ঘটেছে।
অবশ্য তাঁদের রচিত সমালোচনার গ্রন্থই আমাকে বিশেষ সাহায্য করেছে-এ জন্যে তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।