আজকের বিভ্রান্তিময় সময়ে ইসলামের প্রকৃত চেহারা বোঝা যেমন জরুরি, তেমনি কঠিনও। মানহাজুস সালাফ বইটি পাঠককে সেই আসল ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গির দিকে ফিরিয়ে নেয়— যেটি ছিল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবিদের জীবনে বাস্তবায়িত। এটি কেবল তাত্ত্বিক আলোচনা নয়; বরং জীবন, দাওয়াত, আকিদা ও আচরণের প্রতিটি স্তরে সালাফদের মানহাজকে তুলে ধরেছে বাস্তব উদাহরণের মাধ্যমে।
বইটি সম্পর্কে কিছু কথা:
ইসলামের নামে নানা ফিকর, মতবাদ ও দলের ভিড়ে অনেকেই আজ দিশেহারা। কেউ আধুনিকতার নামে ছাড় দিচ্ছে শরিয়াহ থেকে, কেউ আবার চরমপন্থার ফাঁদে পড়ছে। এই বইটি এমন সময়ের জন্যই— যা পাঠককে শেখায়, কীভাবে কুরআন ও সহিহ সুন্নাহর আলোকে সালাফদের পথে অটল থাকা যায়। সহজবোধ্য ভাষায় লেখা এই গ্রন্থে মিলবে চিন্তার স্বচ্ছতা ও ঈমানের দৃঢ়তা গঠনের উপকরণ।
বইটির মূল বৈশিষ্ট্য:
গ্রন্থটি বিশুদ্ধ ইসলামি মানহাজের পূর্ণাঙ্গ ব্যাখ্যা দেয়, যেখানে কুরআন-সুন্নাহর দলিল ও সাহাবিদের বোঝাপড়াকে কেন্দ্র করে প্রতিটি বিষয় সাজানো হয়েছে। এতে তুলে ধরা হয়েছে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহের আকিদা, দাওয়াতের ধরণ, সালাফদের চিন্তা-চেতনার বাস্তব রূপ এবং আধুনিক যুগে উদ্ভূত বিভ্রান্তির যৌক্তিক সমাধান। লেখার ভাষা নিরপেক্ষ, প্রমাণভিত্তিক এবং পাঠক-বান্ধব, যাতে জটিল বিষয়ও সহজভাবে উপলব্ধি করা যায়।
কেন এই বইটি পড়বেন?
যারা জানতে চান ইসলামের বিশুদ্ধ রূপ কী, কিংবা নিজের বিশ্বাসকে সত্য মানদণ্ডে যাচাই করতে চান— তাদের জন্য এই বই অপরিহার্য এক দিশা। এটি শুধু ধর্মীয় জ্ঞান বাড়াবে না, বরং সঠিক পথ চিনতে সহায়তা করবে।
বিভ্রান্ত মতবাদের অন্ধকার থেকে বেরিয়ে আসার আলো পেতে
দাওয়াত, আচরণ ও চিন্তায় সালাফদের বাস্তব অনুসরণ করতে
নিজের ঈমান ও আমলকে সঠিক ভিত্তিতে গড়ে তুলতে এই বইটি হতে পারে দৃঢ় সহচর ও পথপ্রদর্শক।
আল্লামা মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) আধুনিক যুগের একজন স্বনামধন্য আলেম। তাঁর জন্ম ইউরোপের মুসলিম অধ্যুষিত দেশ আলবেনিয়ায়। ১৯১৪ সালে আলবেনিয়ার রাজধানী স্কোডারে (বর্তমান নাম তিরানা) তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন আলবেনিয়ার একজন বিজ্ঞ আলেম। পারিবারিক অসচ্ছলতা থাকা সত্ত্বেও দ্বীনদারী ও জ্ঞানার্জনে তাঁরা ছিলেন সুখ্যাতিসম্পন্ন ও সমৃদ্ধ। আলবেনিয়ায় নারীদের পর্দা নিষিদ্ধ করার পর নাসিরুদ্দীন আলবানীর পরিবার সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে চলে আসেন। দামেস্কে ‘স্কুল অব এইড চ্যারিটি’ নামে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাঁর প্রাথমিক শিক্ষাপর্ব শেষ হয়। এরপর প্রচলিত শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে তাঁর পিতা তাকে স্বতন্ত্র পাঠ্যসূচী তৈরি করে দেন। তাঁর তত্ত্বাবধানেই তিনি আল-কুরানুল কারীম, নাহূ, সরফ, তাজবীদ এবং হানাফী ফিকাহ ইত্যাদি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করতে থাকেন ও একইসাথে কোরআনের হিফযও সমাপ্ত করেন। ইসলামী শাস্ত্রে সুপন্ডিত এই আলেম ঘড়ি মেরামতের কাজকে পেশা হিসেবে নেন। এর অন্যতম কারণ ছিল জ্ঞানার্জন ও গবেষণার জন্য কিছু সময় বের করে নেওয়া। নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এর জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হলো সিরিয়ায় তাওহীদ ও সুন্নাহর দিকে দাওয়াত এবং এর পরবর্তী ঘটনাদি। এই কারণে অনেকেই তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করে এবং তাকে বিভিন্ন প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। তবে তাঁর এই মতবাদের সাথে দামেস্কের প্রসিদ্ধ আলেমগণ ঐকমত্য পোষণ করায় তিনি এগিয়ে যেতে উৎসাহ পান। শাইখ আলবানী দামেস্ক, মিশর ও সিরিয়ার বিখ্যাত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার প্রস্তাব পান। তবে গবেষণার কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি যোগ দেননি। তিনি মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য হিসেবেও মনোনীত হন। আল্লামা মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এর বই সমগ্র, গবেষণাপত্র ও বক্তব্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত হয়েছে এবং ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেমদের কাছে সমাদর লাভ করেছে। তিনি কুয়েত, আরব আমিরাত ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে বক্তা হিসেবে ভ্রমণ করেছেন। আল্লামা মুহাম্মদ নাসীরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এর বই সমূহ হলো ‘আত-তারঘিব ওয়া আত-তারহিব (চার খণ্ড)’, ‘আত-তাসফিয়াহ ওয়া আত-তারবিয়াহ’,’সহীহ ওয়া যাই’ফ সুনান আত-তিরমিযী (চার খণ্ড)’ ইত্যাদি। তাঁর রচিত বইয়ের সংখ্যা এক শতাধিক। হাদীস ও ফিকহ শাস্ত্রে পারদর্শী এই আলেম ১৯৯৯ সালে বাদশাহ ফয়সাল পুরষ্কারে ভূষিত হন। একই বছর জর্ডানে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।