Category:পশ্চিমবঙ্গের বই: হিন্দু ধর্মীয় বই
* স্টক আউট হওয়ার আগেই অর্ডার করুন
আজই শেষদিন! শেষ হচ্ছে বই ও পণ্যে ৭০% পর্যন্ত ছাড়! বছরের সেরা ডিল, রকমারি ক্লিয়ারেন্স সেল, ২০২৫
ভূমিকা
মনুসংহিতা সর্ব্ববেদের সারসংগ্রহ, বৃহস্পতি সংহিতায় লিখিত আছে, “বেদার্থোপ নিবন্ধ জ্বা প্রাধান্যং হি মনোঃ স্মৃতেঃ । মন্বর্থবিপরীতা যা সা স্মৃতির্ন প্ৰশস্যতে ॥” তাৰ্থাৎ মনুসংহিতায় সমস্ত বেদার্থ নিহিত রহিয়াছে, এইজন্য মনুস্মৃতির সহিত যে স্মৃতির বিরোধ হয, সেই স্মৃতির প্রামাণ্য সর্বসম্মত নহে। “যং কিঞ্চিন্মনুরবদৎ তদভেষজং” এই শ্রুতি দ্বারাও মনুস্মৃতির প্রাধান্য কীর্ত্তিত হইয়াছে । সুতরাং ভারতীয় গ্রন্থের মধ্যে বেদের নিম্নেই মনুসংহিতার আসন, মনুই মানবগণের পিতা “মনোরপত্যং পুমান্” এই অর্থেই মানব শব্দ নিষ্পন্ন হইয়াছে, সুতরাং মনুসংহিতার ন্যায় মাননীয় গ্রন্থ ভারতবর্ষে আর দ্বিতীয় নাই । যেমন সর্ব্ব বর্ণের মধ্যে ব্রাহ্মণ শ্রেষ্ঠ, নদীর মধ্যে গঙ্গা শ্রেষ্ঠ, দেবের মধ্যে মহাদেব শ্রেষ্ঠ, সেইরূপ সর্ববশাস্ত্রের মধ্যে মানব ধর্ম্মশাস্ত্রই শ্রেষ্ঠ । “এতদ্দেশ-প্রস্তুতস্থ্য সকাশাদগ্ৰজন্মনঃ। স্বং স্বং চরিত্রং শিক্ষেরন পৃথিব্যাং সর্ববমানবাঃ ॥” ইহা মনুরই ঘোষণা এবং এই ঘোষণার বলেই ব্রাহ্মণের প্রভুত্ব সকল দেশে সমভাবে সুপ্রতিষ্ঠিত । অন্যান্য শাস্ত্রে বিষয়বিশেষের সমালোচনা মাত্র স্থান প্রাপ্ত আছে দেখিতে পাওয়া যায়, কিন্তু মনুসংহিতায় মানবমাত্রের প্রয়োজনীয় নিখিল বিষয়েরই আলোচনা হইয়াছে। “মনু মেকাগ্রমাসীনং” হইতে আরম্ভ করিয়া সমস্ত গ্রন্থে সৃষ্টি প্রকরণ ও সৃষ্ট জীবের যাবতীয় চেষ্টা ও তাহার উপায় বর্ণিত আছে। ভারতীয় দর্শন শাস্ত্র ও ভারতীয় ধর্মশাস্ত্র ইহাই সর্ব্বদা কীৰ্ত্তন করিয়া থাকেন যে, পৃথিবীর সকল রকম সভ্যতা মনুই সর্বর্ব প্রথমে বিস্তার করিয়াছেন, গৃহ, গ্রাম, নগর, বিপণি, রথ্যা, ধর্ম্মশালা, পাঠশালা, রাজ-পরিস্থিতি প্রভৃতি যাবতীয় মানব জাতির সভ্যতার মূল আবিষ্কর্তা ভগবান্ মনু । প্রকারান্তরে মনুই শ্রেষ্ঠ দেবতা, দায়ভাগের টীকাকার শ্রীকৃষ্ণ তর্কালঙ্কারপাদ দায়ভাগের টীকায় “মন্বাদি বাক্যা্যবিমৃষ্য যেষাং যস্মিন্ বিবাদো বহুধা বুধানাং” ইত্যাদি দায়ভাগের মঙ্গলাচরণ শ্লোকের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে মনুর নামকীর্তনকে ঈশ্বর নাম কীর্ত্তন বলিয়া ব্যাখ্যা করিয়াছেন, তাহার সাধকরূপে “এনমেকে বদন্ত্যগ্নিং মনুমেকে প্রজাপতিং । আহুরেকে পরং ধর্ম্ম মপরে ব্রহ্ম শাশ্বতম্ ॥” এই প্রমাণ উদ্ধৃত করিয়াছেন। মহাকবি কালিদাস রঘুবংশ কাব্যে মানব বংশ বর্ণন প্রসঙ্গে “বৈবস্বতে। মনুনাম মাননীয়ে৷ মমীষিণাম্। আসীন্মহীক্ষিতামা্যঃ প্রণবচ্ছন্দসামিব ।” এই শ্লোকে মনুকে ভূমণ্ডলবাসীর মধ্যে উচ্চ আসন প্রদান করিয়াছেন, তাহাতে তাঁহার বক্তব্য এই যে, যেরূপ “ওঁ” কার সকল বেদের সার, সেইরূপ ভগবান মনু সকল মর্ত্য-মণ্ডলবাসীর সার। ভারতের দায়াধিকার রচনার প্রথমে মনুকেই মধ্যস্থ বলিয়া স্বীকার করা হইয়াছে। পৃথিবীর দিগদিগন্ত বাসী রাজনীতিকগণ রাজনীতি চর্চ্চার প্রারম্ভে মানব শাস্ত্রকে রাজনীতি বিষয়ে অভ্রান্ত বলিয়া স্বীকার করিয়া থাকেন । কালের কুটীল আক্রমণে মর্ত্যবাসিগণ নিতান্ত দুরবস্থার চরম সীমায় উপনীত হইলেও ভারতীয় সনাতন ধৰ্ম্মিগণ এখনও মনুশাস্ত্রকে সর্ব্বোচ্চ সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত রাখিতে পরাঙ্মুখ নহেন।
Report incorrect information