চিন্তা করতে পারার ক্ষমতা মানুষকে অন্য প্রাণি থেকে আলাদা করেছে, তাকে স্বাতন্ত্র্য দিয়েছে। তবে চিন্তা যদি প্রাগ্রসর না হয়, এটি যদি বিবর্তনের মধ্য দিয়ে না এগোয়, তবে এটি মানুষকে বিশেষত্ব দিতে পারে না। যেখানে প্রপঞ্চের বিপরীতে প্রতি-প্রপঞ্চ ক্রিয়াশীল, যেখানে ন্যারেটিভের বিপরীতে প্রতি-ন্যারেটিভ সক্রিয়, সেখানেই নির্মাণ হয় নতুন জ্ঞানের। আসলে, জ্ঞানের বিবর্তনই হলো সভ্যতার বিবর্তন। জ্ঞান যেখানে স্থবির সমাজ সেখানে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়, যা শুধু কুসংস্কার, অন্ধত্ব, গোঁড়ামি, সাম্প্রদায়িকতা ও অসহিঞ্চুতার আগাছার জন্ম দেয়। জ্ঞানের অগ্রগতিই মানুষের অগ্রগতি। এই জ্ঞানের নির্মাণের জন্য যেমন ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের, চেতনের সঙ্গে অবচেতনের, বর্তমানের সঙ্গে অতীতের বা ইতিহাসের দ্বিরালাপ অত্যাবশ্যক, তেমনি চিন্তা ও মননের মধ্যে ঘনিষ্ঠ ও কৌতূহলী মিথষ্ক্রিয়াও জরুরি। বিনা বিতর্কে ছেড়ে দেওয়া নয়, বরং প্রশ্ন করার মধ্য দিয়ে চিন্তা-ব্যবস্থার মাটি খুঁড়ে খুঁড়েই জ্ঞানের প্রত্নসম্পদের অনুসন্ধান চালাতে হয়। জ্ঞান একটি শক্তিশালী ব্যবস্থা, বিমূর্ত কোন বিষয় নয়। এটি নিয়ন্ত্রণ-যন্ত্রও বটে। তাই এর বিরুদ্ধে রেজিসট্যান্স বা প্রতিরোধ তৈরির মধ্য দিয়েই নতুন জ্ঞানের নির্মাণ হয়। যে সমাজ এই নিয়ন্ত্রণ, রেজিসট্যান্স ও নির্মাণের মধ্য দিয়ে যায়, সেটিই প্রগতিশীল সমাজ এবং তার সাহিত্যই প্রগতি সাহিত্য। সাহিত্যের কাজ তো মানুষকে ঘুমপাড়ানি গান শোনানো নয়, বরং তাকে জাগিয়ে রাখা, দ্বিরালাপের জায়গায় আহবান জানানো, সমাজ-ব্যবস্থায় প্রচলিত ডায়ালেকটিক্স- এর মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেওয়া। প্রগতি সাহিত্য গ্রন্থটি সাহিত্যের এই বিষয়টিতেই পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চায়।