1 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
TK. 630
আজই শেষদিন! শেষ হচ্ছে বই ও পণ্যে ৭০% পর্যন্ত ছাড়! বছরের সেরা ডিল, রকমারি ক্লিয়ারেন্স সেল, ২০২৫
বইটি বিদেশি সাপ্লাইয়ারের নিকট থেকে সংগ্রহ করতে ৩০-৪০ দিন সময় লাগবে।
Related Products
Product Specification & Summary
একা একা ঘোরা ফেরা, মনে মনে কথা বলা। মনের কথা মুখে এসে ওঠে না; কলমে তো দূরের কথা। কত স্বপ্ন ঘুম ভাঙার গোধূলি লগ্নে এসে মুচকি হেসে কোথায় চলে যায়। কত মানুষ, কত রাস্তা একদিন আবছা স্মৃতি হয়ে নিজের পথেই হারিয়ে যায়। সেগুলোকে ফ্রেমে ধরব ধরব করেও ধরা হয় না। আর ধরবেই বা কি! হয় যত্তসব আজগুবি উদ্ভট কল্পনা নয় তো ওই এক পলকের একটু আলাপ আর কি! সেই ছেলেভুলানো ছড়ার মতো,
“থেনা নাচন থেনা,
বটপাকুড়ের ফেনা”
কিন্তু শঙ্খ ঘোষ যখন তাঁর হাতের দু মুঠো থেকে সেই বটপাকুড়ের ফেনা ছড়িয়ে দেন, তখন এক জাদুবলে তা শুধু অর্থহীন ধ্বনি আর অর্থবান ছবি হয়ে থাকে না। একটা কল্পলোকের মজলিশ বসে লেখকের সঙ্গে। তাঁর দেখাশোনার জগতের নানা বিলীয়মান, অকিঞ্চিৎকর কাহিনি; তাঁর অপ্রবহমান স্বপ্নবৃত্তান্ত সবকিছু একটা আলগা সুতোর মধ্যে জড়িয়ে জড়িয়ে তিনি এগিয়ে যান। কোনো বন্ধন নেই, নেই কোনো পারস্পরিক নিবিড়তা। শঙ্খ ঘোষ নিজের সঙ্গে নিজে কথা বলতে বলতে আপনাকেও নিয়ে যাবেন বিকেল ঘনিয়ে আসা এক শান্ত শীতল পুকুর পাড়ে। সেখানে আপনি যখন খুশি আসুন, ব্যস্ততা থাকলে বেরিয়ে যান, কোথাও কল্পনায় ছেদ পড়বে না।
শঙ্খ ঘোষ উজাড় করে দেন তাঁর স্মৃতিপট। এই হয়তো তিনি গিরিশ মঞ্চে নাটকের রিহার্সালে অশীতিপর তাপস সেনকে দেখছেন তো খানিক পরেই শিউড়ির কোনো এক মাস্টারমশাইয়ের গল্প বলছেন। শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লিতে পুলিনবিহারী সেনের কণ্ঠে ‘আজ জ্যোৎস্নারাতে সবাই গেছে বনে’ শোনার রেশ কাটতে কাটতে গিয়ে পৌঁছোবেন রাজারহাটে ফতেমা-দেবব্রত-গিয়াসুদ্দিনের দলে। নন্দনচত্বরে সরকারি নোটিশে ‘অনুমত্যানুসারে’ দেখে তাঁর চোখ আটকায়, আবার অন্য কোথাও কত সহজে তিনি বুঝিয়ে দেন বাংলা ভাষায় হিন্দি আধিপত্যের স্বরূপ। বাংলাদেশের মোহাম্মদ রেজোয়ানের ‘নৌকাস্কুল’-এর কাহিনি, জীবনানন্দের বরিশালের প্রকৃতির মুগ্ধতা ভাঙে যখন তিনি তাঁর বাড়ির পাশের মাঠে বিরাট ফ্ল্যাট ওঠার খবর পান। তিনি কোরানের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, তার পরেই বলছেন রবীন্দ্রনাথের চতুরঙ্গের ‘পেট্রিয়জম’ সম্বন্ধে। আর ‘পা ডোবানো অলস জলে’ তিনি আধো ঘুমন্ত স্বপ্নের মধ্যে কথা বলছেন তাঁর কবি সত্তার সঙ্গে, “রিমঝিম বৃষ্টি একটু, আর ঘন কুয়াশা। তার মধ্যে দিয়ে এগোতে এগোতে দেখি তিন দিক ঘিরে আসছে জল, একই সমতলে। সে-জল যেন সমুদ্রমতো, যতদূর দেখা যায়, দিগন্ত অবধি। কুয়াশার শাদা ফেনপুঞ্জের শাদা আর মার্বেল পাথরের শাদা—জড়িয়ে থাকা সব শাদার মাঝখানে ঝিরঝিরে ভিজতে ভিজতে উদ্ভ্রান্তের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছি কাউকে।”
এই আত্মানুসন্ধানের শুরু নেই, শেষও নেই। এই বইও তাই। ভূমিকা বা উপসংহারের বালাই নেই। জীবনের অতলে চারিয়ে যাওয়া ঘটনাবলিতে শুধু উঁকি মারা মাত্র। যার মধ্যে ব্যক্তি ও কবি শঙ্খ ঘোষের মধ্যেকার একটা যোগসূত্র লক্ষ্য করা যায়। সেই অর্থে এই বই কোনো আত্মকথা নয়, কোনো ডায়েরি নয়। এই বই যেন দুটি মানুষের এক গ্রন্থিতে পথ চলার এক নিরন্তর জার্নাল।