ছোট্ট শহর পিরোজপুর। পশ্চিমধার ঘেঁষে বয়ে গেছে বলেশ্বর নদী। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বলেশ্বর ঘাটে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে পিছন থেকে গুলি করা হত। নদীঘাটের পানি লাল ঘোলাটে হয়ে থাকতো সেসময়। পিরোজপুর সদরে মতিন মওলানার মেয়ে রেহানা। যুদ্ধের সময় সতের বছরের যুবতী সে। রাজাকারের কুদৃষ্টি পড়ে রেহানার উপর। মতিন মওলানাকে বাধ্য করে পাকিস্তানী মিলিটারির সাথে রেহানাকে বিয়ে দিতে। রেহানা গর্ভবতী হয়। যুদ্ধশেষে গর্ভপাত করাতে ঢাকা নিয়ে আসে কিন্তু ততদিনে দেরি হয়ে যায়। জন্ম নেয় একটি মেয়ে শিশু। চার্চের সিস্টাররা নাম রাখে বকুল। কঠিন সংগ্রামের মধ্যে বেড়ে ওঠা বকুলকে সমাজ মেনে নেয় না। গ্রামে সবাই বলে, পাকিস্তানি বংশ, রাজাকারের নাতি।
সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯০ সালে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানিদের দালাল জামাতে ইসলামির সাথে জোট বেঁধে ক্ষমতায় আসে সরকার। গোলাম আযমকে জামাতের আমীর ঘোষণার পর ক্ষোভে ফেটে পড়েন শহিদ জননী জাহানারা ইমাম। ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে ১৯৯২ সালে গঠন করেন ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। গণআদালতে যুদ্ধাপরাধীর বিচারের জন্য আন্দোলন করেন। তৎকালীন সরকার জাহানার ইমামসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা দায়ের করে। জামিল তখন মাস্টার্স পড়ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। আন্দোলনে সেও অংশ নেয়। পকোত্তরে নির্যাতিত নারীদের জন্য কিছু একটা করার তীব্র বাসনা জাগে। গ্রামে গিয়ে পরিচয় হয় রেহানা খালার মেয়ে, একাত্তরের যুদ্ধশিশু বকুলের সাথে। পরিবারের অগোচরে বিয়ে করে আনে। কিন্তু দুর্বিসহ হয়ে ওঠে বকুলের বেঁচে থাকা। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে ১৯৯০ পরবর্তী সময়টা অত্যন্ত গুরুত্ববহ। স্বাধীন দেশে রাজাকার আলবদরদের সরকারি পৃষ্ঠপেষকতা দেয়া এবং সাধারণ জনগনের বিক্ষোভ যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে। শহীদ জননী জাহানারা ইমাম যে চেতনা জাগ্রত করে দিয়েছিলেন তা সফলতায় রূপ নেয় ২০১৩ সালে শাহ্বাগ আন্দোলনের মাধ্যমে। কিন্তু তারপরও সমাজ কি মেনে নিতে পেরেছে একাত্তরের নির্যাতিত নারীদের? তাদের গর্ভে জন্মনেয়া সন্তানদের?
একাত্তরের এক যুদ্ধশিশুর সত্য ঘটনা অবলম্বনে গবেষণাভিত্তিক উপন্যাস ‘বকুল ফুল’।
১৯৭১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কাহিনীর বিস্তৃতি। মুক্তিযুদ্ধ, শহিদ জননী জাহানারা ইমামের গণআদালত এবং শাহবাগ আন্দোলনÑ সবই উঠে এসেছে গল্পে।