17 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
TK. 450TK. 389 You Save TK. 61 (14%)
আজই শেষদিন! শেষ হচ্ছে বই ও পণ্যে ৭০% পর্যন্ত ছাড়! বছরের সেরা ডিল, রকমারি ক্লিয়ারেন্স সেল, ২০২৫
Related Products
Product Specification & Summary
আকাশে হঠাৎ মেঘ জমেছে।
মেঘের আড়ালে ঢাকা পড়েছে চাঁদ ও জোছনাটাও। বিষয়টা নয়নকে ভীষণ পীড়িত করল। সে ভেবেছিল জোছনার স্নিগ্ধ আলো গায়ে মাখতে মাখতে মায়ের পাঠানো চিঠি পড়বে। কিন্তু সেই ইচ্ছায় এক ধামা ছাই দিয়ে দিল ভাগ্যটা । সকালের সেই কুঁ ডাকটা হঠাৎ করেই যেন আবার ফিরে এলো। সে বুঝতে পারছে না কেন এই অনুভূতি! তবু ছাদের উপর বসেও চিঠিটা বোধ হয় পড়তে পারবে সে।
তেরছা হয়ে আসা রাস্তার ল্যামপোস্টের আলোয় জাগয়াটা কেমন ফিকে হয়ে আছে। চিঠির গোটা গোটা অক্ষর পড়তে খুব একটা বেগ পেতে হবে না। অমন আলোয় বই পড়া তার অভ্যাস সেই ছোটকাল থেকেই। নয়ন ভেবেছিল চিঠিতে মা হয়ত কত কত কথায় না জানি লিখেছেন, কত কত অভিমান ভরা কথা বলেছেন । কিন্তু চিঠির ভাজ খুলতেই তার বুকের ভেতর হু হু করে সবকিছু যেন শূন্যতা হয়ে গেল। মাত্র কয়েক লাইনের চিঠি । কিন্তু কয়েকটা কথা নয়নকে সমূলে নাড়িয়ে দিল তার জায়গা থেকে। আকস্মিক তার মনের অমন কুঁ ডেকে উঠার কারণ এতক্ষণে সে আবিষ্কার করতে পারল । আমেনা বানুর নামে চিঠি পাঠিয়েছে তার ছোট চাচা। চিঠিতে লিখেছে “ নয়ন ক্যামন আছো বাবা? আশারাখি ভালো আছো। তয় এইদিকে আমরা বিশেষ একখান ভালো নাই । তোমার মায়ের মারাত্মক অসুখ দেহা দিছে । তোমার মায়ে তোমারে দেহনের লাইগ্যা ছটফট করতাছে । তুমি যত জলদি জলদি ফিরা আইসো যদি মায়ের শ্যাষ মুখ দেখবার চাও। আবু তাহের ডাক্তার কইয়্যা গেছে সময় নাকি অতি অল্প । চিঠি পাওয়া মাত্রই তুমি ফিরা আইস বাবা। দেরি কইর না।
ইতি,
তোমার ছোট চাচা। ”
নয়ন টিঠি হাতে খানিক নিস্তব্ধ হয়ে বসে রইল। আচমকা ইলেক্ট্রিসিটি চলে গেল। তারপর দীর্ঘ নৈঃশব্দ্য ঘেরা অন্ধকারের মাঝে তার মনে হতে থাকল, এই মুহুর্তে সে তার মাকে দেখতে না পারলে বুকের ভেতর দম বন্ধ হয়ে নির্ঘাত মারা পড়বে । তার গলার কাছটা প্রকাণ্ড তেষ্টায় খাখা করছে। ক্রমাগত জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকল। আকাশের ভীষণ মেঘ করেছে। পরিবেশ ভয়াবহ রকম শান্ত, থমথমে বিরাজ করছে। ভেপসা গরমও পড়ছে। গুমোট মেরে থাকা পরিবেশ স্পষ্ট যেন জানিয়ে দিচ্ছে আজ রাতে চরাচর ভাসিয়ে দেওয়া বৃষ্টি নামবে। প্রবল বৃষ্টিতে ভেসে যাবে এই লোকারন্য শহর, শহরের অলিগলি, রাস্তাঘাট । সকালে উঠে দেখবে রাস্তায় হাটু পানি বেঁধে গেছে বৃষ্টিতে। ঘর ছেড়ে মানুষ বাইরে বের হচ্ছে না খুব প্রয়োজন না হলে। সবাই তুমুল বৃষ্টি দেখছে ঘরে বসে বসে। এর চেয়ে মধূর অনুভূতিময় দৃশ্য আর হয় না। নয়ন অপেক্ষায় রইল সেই তুমুল বৃষ্টির। এই শহরের অলিগলি, রাস্তাঘাট ভাসিয়ে দেওয়া তুলুম বৃষ্টির অপেক্ষায়। সেই তুলুম বৃষ্টিতে সে তার বুকের ভেতর অপ্রকাশিত দাবানলে পুড়ে ছারখার করে ফেলা, প্রকাণ্ড তেষ্টায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাওয়ার সবটুকু চুকিয়ে দেবে এই তুমুল বৃষ্টিতে । নয়ন অপেক্ষায় রইল বৃষ্টির।