22 verified Rokomari customers added this product in their favourite lists
TK. 1500TK. 1299 You Save TK. 201 (13%)
Related Products
Product Specification & Summary
একাত্তরের দুর্লভ ছবির প্রদর্শনী
চারদিকে ধু-ধু মাঠ। এরই মাঝখানে পড়ে আছে একটি তরুণের লাশ। বুকের মাঝখান থেকে হাঁটু পর্যন্ত কিছু নেই। শুধুই কঙ্কাল আর নাড়িভুড়ি বের হয়ে আছে। মুখটুকু দেখে হয়তো চিনতে পারতেন স্বজনরা। মুক্তিযুদ্ধে পরাজয় নিশ্চিত জেনে শহর থেকে পালানোর আগে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বন্দি এক তরুণ মুক্তিযোদ্ধাকে বিস্ফোরক দিয়ে এভাবেই হত্যা করে। চিত্রটি ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে জামালপুর থেকে তোলা। ছবির ক্যাপশনে 'ধর্ম ও পাকিস্তানের অখণ্ডতার নামে এভাবেই খুন করা হয়েছে স্বাধীনতাকামী বাঙালিকে'। এ রকম আরও এক শহীদ মুক্তিযোদ্ধার বিকৃত লাশের ছবির নিচে লেখা 'আমরা কি ভুলে যাব এইসব মৃত্যুহীন প্রাণ, যাদের আত্মদানে এই বাংলাদেশ?'
মুক্তিযুদ্ধকালে এ রকম অনেক মর্মস্পর্শী চিত্র ধরা পড়েছে সে সময়ের তরুণ মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক হারুন হাবীবের ক্যামেরায়। মুক্তিযুদ্ধকালে তোলা এ রকম একশ'টি দুর্লভ ছবি স্থান পেয়েছে গতকাল সোমবার শুরু হওয়া তিন দিনব্যাপী প্রদর্শনীতে। রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ পেতে বাঙালিকে কতটা ত্যাগ আর কষ্ট সইতে হয়েছে তা নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই এ আয়োজনের উদ্দেশ্য বলে জানান আয়োজকরা।
প্রতিটি ছবিতেই ধরা পড়েছে বাঙালির সে সময়ের আত্মত্যাগের চিত্রে। গ্রামগঞ্জের
সাধারণ যুবক তরুণদের মুক্তিযুদ্ধে জয়ের দৃপ্ত শপথ আর বীরত্বগাঁথা। গেরিলা দলের প্রস্তুতি। গেরিলা যোদ্ধাদের মুক্তিযুদ্ধকালে নানা বাধা পার হয়ে যুদ্ধে অংশ নেওয়া। নবীন মুুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ। পাক হানাদারদের বর্বরতার নানা চিত্র। রণাঙ্গনের সাফল্যের খবরে দুঃসময়েও বাঙালির আনন্দ মিছিল। শরণার্থী শিবিরের চিত্র। মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার তৈরির দৃশ্য, আহত শিশু, নারী, মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ফিল্ড হাসপাতাল, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, দুর্গম এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের অংশগ্রহণ, প্রশিক্ষণ গ্রহণ, পাকিস্তানিদের কাছ থেকে অস্ত্র উদ্ধার। ধৃত রাজাকার। ভারতের ত্রিপুরায় শরণার্থী শিবিরে সে সময়ের মার্কিন সিনেটর এডওয়ার্ড কেনেডির আগমন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর শরণার্থী শিবির পরিদর্শন। মিত্রবাহিনীর যুদ্ধে সহযোগিতা। মুক্তিবাহিনীর ঢাকামুখী অগ্রসর হওয়ার দৃশ্য। পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের দৃশ্য। ধীরে ধীরে একেকটি এলাকা মুক্ত করা। অতঃপর ঢাকা স্টেডিয়ামে ১৯৭২ সালের মার্চে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর বিদায় অনুষ্ঠানে নবগঠিত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতীয় মিত্রবাহিনী প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা। এভাবেই একের পর এক ধারাবাহিক চিত্রের মতো মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের একশ'টি ছবি জীবন্ত হয়ে উঠেছে দর্শকের চোখে।
উদ্বোধনকালে এসব দুর্লভ ছবির চিত্রগ্রাহক সাংবাদিক হারুন হাবীব জানান, রণাঙ্গনে একহাতে স্টেনগান থাকলেও শুধু ঝোঁকের কারণে অন্য হাতে ক্যামেরা নিয়ে দুর্লভ চিত্রগুলো তুলেছি। আর এজন্যই মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পর তরুণ প্রজন্মের জন্য মুক্তিযুদ্ধ ইতিহাসের এই অমূল্য দলিল, অকৃত্রিম ইতিবৃত্ত রেখে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধকালে অস্থায়ী মুজিবনগর সরকারের রণাঙ্গন সংবাদদাতা হারুন হাবীব বলেন, আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছি আর নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধকে রক্ষা করবে এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বেগবান করবে।