"বাংলায় বাজে গির্জার বাঁশি" বইয়ের মুখবন্ধ থেকে নেয়াঃ
আমরা ‘দায়ি’ জাতি। আমাদের সৃষ্টি করে পৃথিবীতে পাঠানাে হয়েছে মানুষের কল্যাণের জন্যে। চাই সে হিন্দু হােক, তােক খ্রিস্টান, কিংবা মুসলিম। দুনিয়ায় আমাদের পাঠানাের উদ্দেশ্য হলাে, আল্লাহর বান্দাকে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক করিয়ে দেওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন— گفتم خير أم أخرجت للناس تأمرون بالمعروف وتنهون عن المنكر وتؤمنون بالله কিন্তু আজ আমরা আমাদের উদ্দেশ্য ভুলে গেছি। ফলে আমরা দায়ি জাতি রূপান্তরিত হয়েছি ‘মাদউ’তে। আমাদের দাওয়াত দেওয়া হচ্ছে খ্রিস্টবাদের দিকে। মুসলিমদের বানানাে হচ্ছে খ্রিস্টান। কাদিয়ানি, বাহারি, শিয়া—আরও কত বাতিল ফিরকায় মুসলিমদের জাহান্নামি বানানাে হচ্ছে! আর আমরা যারা নিজেদের ওয়ারিসে আম্বিয়া দাবি করি—পৃথিবীতে এসেছি মানুষের কল্যাণের জন্য—তারা আছি ঘুমিয়ে।
আল্লাহ যদি কাউকে দ্বীনের কিছু খেদমত করার সুযােগ দিয়ে থাকেন, তাতেই আমরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলি। মজার বিষয় হলাে, মুসলিমদের যারা খ্রিস্টান বানাচ্ছে, তাদের নিজেদের ধর্মের দিকে মুসলিমদের আকর্ষণ করার মতাে কিছু তাদের কাছে নেই। ফলে কুরআনের অপব্যাখ্যা করেই তারা মুসলিমদের বিভ্রান্ত করে। আমরা দাওয়াতের ময়দানে দেখেছি এবং এমনও পেয়েছি যে, ইমাম সাহ্বে খ্রিস্টান। মানিকগঞ্জ এবং ঝিনাইদহে পেয়েছি পীর সাহেব খ্রিস্টান। শেরপুরে পেয়েছি এক মৌলভি সাহেব খ্রিস্টান। তারা মুসলিম থেকে খ্রিস্টান হয়ে ইসলামি পরিভাষা ব্যবহার করে মুসলিমদের খ্রিস্টান বানায়। বিভিন্ন জায়গায় মানুষকে টাকার লােভ দেখিয়ে দলে দলে মুরতাদ বানায়। কোথাও আবার অন্য কোনাে কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে। মােটকথা, নানান রকম প্রতারণা করে মুসলিমদের ধর্মহীন করে। এই যে আমাদের বিপর্যয়, এর মূল কারণ হলাে—আমরা দাওয়াত ছেড়ে দিয়েছি, আমরা আমাদের কাজ ভুলে গিয়েছি, ফলে তারা দাওয়াত দিয়ে মুসলিমদের খ্রিস্টান বানাচ্ছে।
এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলােচনা করা হয়েছে এই বাংলায় বাজে গির্জার বাঁশি বইতে। লেখক ওমর আলী আশরাফ ভাই সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন দাওয়াতের কথা। বইতে তার দাওয়াতি এবং ব্যক্তিগত সফরের বাস্তব চিত্র ও নির্ভুল তথ্য তুলে ধরেছেন। নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন এবং বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি পেশ করেছেন। তিনি যেমন এনজিও ও মিশনারি সমস্যা তুলে ধরেছেন, তার থেকে উত্তরণের উপায়ও বাতলে দিয়েছেন। আমি আশাবাদী, এই বই পড়ে পাঠকের দাওয়াতি স্পৃহা তৈরি হবে, ঈমান-রক্ষার চেতনা জাগ্রত হবে এবং উন্মতের প্রতি অন্তরে দরদ সৃষ্টি হবে। আল্লাহর পথে কাজের আগ্রহ তৈরি হবে এবং অনেক অজানা তথ্য জানতে পারবে। আল্লাহ লেখকের জবান ও কলমকে কবুল করুন। সকল অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। আমিন।
আমি ওমর আলী আশরাফ। জন্ম ১৯৯২ সালের ২ জুন। বেড়ে ওঠা গ্রামের বাড়ি ওয়াসেকপুরে। এটি নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলায় অবস্থিত। ৫ ভাই ২ বোনের মধ্যে আমি ষষ্ঠ। আমি হিফজ সম্পন্ন করি আমাদের গ্রামের প্রসিদ্ধ মাদরাসা জামেয়া ইসলামিয়া আজিজিয়া ওয়াসেকপুরে। তারপর একজন যোগ্যতর আলেম হওয়ার লক্ষ্যে বাড়ি ছেড়ে এসে ভর্তি হই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থিত দারুল উলুম মাদানীনগর মাদরাসায়। আমার যা কিছু অর্জন এবং মানস গঠন, তার প্রায় পুরোটারই কৃতিত্ব এখানকার প্রিয় উস্তাযগণের। শিক্ষাজীবনের শেষ তিন বছর কাটাই পুরান ঢাকার জামেয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলুম ফরিদাবাদ মাদরাসায়। এখান থেকে সম্পন্ন করি তাকমিল ফিল-হাদিস। বর্তমানে অধ্যয়ন ও লেখালেখি আমার প্রধান ব্যস্ততা। ভ্রমণ আর সংগীত বিশেষ পছন্দ। পাশাপাশি রয়েছে ‘বিন্যাস’ নামক বইপুস্তক সম্পাদনা, অনুবাদ ও প্রস্তুতকরণের একটি বহুমাত্রিক প্রতিষ্ঠান।