"দ্য সেভেন্থ স্ক্রৌল" বইটির ভূমিকাঃরিভার গড এর বাংলা সংস্করণ প্রকাশের পর থেকে প্রচুর পাঠক, শুভানুধ্যায়ী, যারা ই-মেইল, ফোন বা পত্রের মাধ্যমে নিজেদের উচ্ছ্বাসের কথা জানিয়েছে, তাদেরকে ধন্যবাদ। যতোটা না লেখক বা অনুবাদক, তার চেয়ে বেশি পাঠক আমি। বিদেশি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখার স্বাদ নেওয়ার সময় বারবারিই মনে হতো, প্রাচীন মিশরের পটভূমিতে যে প্রচুর সংখ্যক ঐতিহাসিক উপন্যাস আছে, তার একটা ঝলক বাংলায় আসা উচিত। ভয়ও ছিল, বিশাল কলেবর এবং কাহিনীর ধীরগতি হয়তো পাঠকের জন্য সুস্বাদু মনে হবে না। কিন্তু রিভার গড সেই ভয় দূর করেছে। আমি ভাগ্যবান-বাংলাদেশের পাঠক আমার রূপান্তর গ্রহণ করেছেন। উইলবার স্মিথের মিশরীয় পটভূমির উপন্যাসগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়, বিশ্বের বড় বড় সব কয়টি ভাষায় তা অনুবাদিত হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জননী, আমার বাংলায় তা কেন হবে না- এ রকমই একটা জেদ থেকে উইলবারের সাহিত্য-দূত মার্টিন পিক সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। কাকতালীয় ব্যাপার, মার্টিন সাহেব ১৯৭০ সালে বাংলাদেশে ছিলেন, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের পক্ষে কাজ করতেন এ ঢাকায়। তাঁর উৎসাহ, উইলবারের সমর্থন আমার আগ্রহ আরো বাড়িয়েছে।
আগে যেমন বলেছি, অনুবাদ সময় সাপেক্ষ এবং অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য কাজ। পেশাগত ব্যস্ততা অনেক সময়েই বাধ সাধে এ কর্মে, তারই ফলে বই প্রকাশে অপ্রত্যাশিত বিলম্ব। আগের মতোই বানানরীতি রইলো এখানেও, যদিও কাহিনীটি অনেকটাই ভিন্নতর।
যারা রিভার গড পড়ে জানতে চেয়েছেন টাইটা’র তারপর কী হলো, তাদেরকে কেবল এতোটুকু বলি, টাইটা কিন্তু এখনো বেঁচে -আমি শুনেছি, এ মুহূর্তে বিশ্বের বেশ কয়টি দেশে তার নাম তালিকার এক নম্বরে আছে, গত আগস্ট মাস থেকেই ।
উইলবার এডিসন স্মিথ, সাহিত্য জগতে উইলবার স্মিথ নামে যার ব্যাপক খ্যাতি রয়েছে | উইলবার স্মিথ মূলত একজন অ্যাডভেঞ্চারধর্মী থ্রিলার লেখক। ১৯৩৩ সালের ৯ জানুয়ারি উত্তর রোডেশিয়ার ব্রোকেনহিলে জন্মগ্রহণ করেন এ লেখক। শিশুবয়স থেকে বইয়ের প্রতি যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছিলো তার অবদান সম্পূর্ণ স্মিথের মায়ের। সেকেন্ডারি স্কুলে পড়ার সময়ে স্কুল ম্যাগাজিনের গুরুভাগ দায়িত্বই ছিলো তার কাঁধে, তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন সাংবাদিক হওয়ার। কিন্তু পিতার উপদেশে সে পথে আর যাননি, বেছে নিয়েছিলেন কর্পোরেট জীবন। রোডস ইউনিভারসিটি থেকে স্নাতক শেষ করে চার্টার্ড একাউন্টেন্ট পদে নিযুক্ত হন। তবে স্বপ্নের কাছে শেষমেশ নতি স্বীকার করতে হয়েছিলো। ১৯৬৪ সালে ‘হোয়েন দ্য লায়ন ফিডস’ উপন্যাস প্রকাশের মাধ্যমে তার সাহিত্যজগতে প্রবেশ, কিন্তু শুরুটা তত সহজ ছিলো না। এর আগে যে পান্ডুলিপিটা তিনি প্রকাশকদের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তা ২০ বার প্রত্যাখান করা হয়েছিলো। তবে প্রথম উপন্যাস প্রকাশের পর তাকে আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই বিলিয়নিয়ার লেখকের এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪৬টি। উইলবার স্মিথ এর বই সমগ্র এর মাঝে উল্লেখযোগ্য হলো ‘দ্য ডায়মন্ড হান্টারস’, ‘দ্য ডার্ক অফ দ্য সান’, ‘ক্রাই উলফ’, ‘ওয়াইল্ড জাস্টিস’, কোর্টনি সিরিজ, ব্যালান্টাইন সিরিজ, প্রাচীন মিশর সিরিজ। সাধারণত তার বেশিরভাগ উপন্যাসই উল্লেখিত ৩টি সিরিজের অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। বিশ্বব্যাপী তার বইসমূহের ১২০ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে। উইলবার স্মিথ এর অনুবাদ বই সমূহ ২৬টি ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে যা ইংরেজি ভাষায় লেখা বইগুলোর মতো সমান জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। ব্যক্তিগত জীবনে প্রথম দুই স্ত্রীর সাথে বনিবনা না হলেও তৃতীয় স্ত্রীকে তিনি ভালোবাসতেন। তবে ক্যান্সারে তার স্ত্রীর অকাল মৃত্যু ঘটে। বর্তমানে চতুর্থ স্ত্রী মোখিনিসোর সাথে লন্ডনে বসবাস করছেন এই বর্ষীয়ান লেখক।