বেশ কয়েকটি ভ্রমণ কাহিনী লেখার পর স্বভাবতই অন্য বিষয় নিয়ে লেখার ইচ্ছা হয়েছিল। কিন্তু বিশেষ কোনো কারণে গত দু'বছর নতুন কিছু লিখতে পারিনি।
এর মধ্যেই বাংলাদেশে এক ধরনের নতুন সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছিল। আগস্ট, ২০১৭ সালের পর আমাদের দক্ষিণ-পূর্বের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের (বার্মা) উত্তর রাখাইনে রোহিঙ্গা জাতি নির্মূলে ওই দেশের সরকার এবং সামরিক বাহিনীর নির্মম গণহত্যা এবং লোমহর্ষক অত্যাচারে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। যাদের নিজেদের ভিটেমাটি এবং দেশে প্রত্যাবর্তন অনিশ্চিত।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শত শত বছর ধরে রাখাইন (পুরাতন আরাকান) অঞ্চলে বসবাসরত থাকলেও বার্মা বর্তমানে মিয়ানমার সামরিক সরকার হতে শুরু করে আং সাং সু চি'র, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী, তথাকথিত বেসামরিক সরকার তাদের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি না দিয়ে দেশছাড়া করেছে। মিয়ানমার সরকার বিগত ৩০ বছর ধরে রোহিঙ্গাদের বিদেশি 'বাঙালি' আখ্যা দিয়ে জাতিগত নির্মূলের যে পরিকল্পনা করেছিল তারই চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ২০১৭ সালে।
২০১৭ সালে রোহিঙ্গা নির্যাতন সমগ্র পৃথিবীকে নাড়া দিয়েছে। আমাদের সরকার মানবতার প্রেক্ষিতে মাতৃভূমি হতে বিতাড়িত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়াতে প্রশংসিত হলেও এদের ফেরত পাঠাবার ব্যাপারে মিয়ানমারের সাথে দ্বি-পক্ষীয় আলোচনা করলেও তেমন সাফল্য এসেছে তা বলা যায় না।
যা হোক, রোহিঙ্গাদের দুর্দশা আমাদের দেশের আপামর জনসাধারণকে দারুণভাবে প্রভাবিত করেছে। যে কারণে বর্তমানের মিয়ানমার পূর্বতন বার্মা সম্পর্কে জানবার আগ্রহ বেড়েছে। আমরা অনেকেই তৎকালীন বার্মার অভ্যন্তরীণ এবং দেশ সম্বন্ধে খুব বেশি খোঁজ-খবর রাখিনি। বার্মার ইতিহাস সহস্র বছরের পুরাতন। তবে উপনিবেশ-উত্তর বার্মা সম্বন্ধেও তেমন জানা হয়নি।
উপরের মুখবন্ধের আলোকেই আমার এ প্রয়াস। বার্মা বা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ জটিলতা এবং রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব দরবারে এর অবস্থান সামরিক ও রাজনৈতিক ইতিহাস তুলে ধরবার চেষ্টা করেছি। বইটি কয়েকটি অধ্যায়ে বিন্যাস করা হয়েছে। আশা করি, এ বইয়ের পাঠকরা বার্মা বা মিয়ানমারের কিছু আঙ্গিকের সাথে পরিচিত হবেন। আমাদের আশা যে, বিশ্ববাসী রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরে সম্মানের সাথে বসবাসের নিশ্চয়তা দেবেন।
১৯৪৮ সনের ১ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৬ সনে তৎকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় দু’বছর পাকিস্তানের বন্দি শিবিরে কাটিয়ে ১৯৭৩ সনে দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ১৯৭৫ সনের ডিসেম্বর পর্যন্ত ঢাকায় ৪৬ ব্রিগেডে স্টাফ অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি ১৯৭৯-৮১ সনে ঢাকায় সেনাসদরে গুরুত্বপূর্ণ পদে অপারেশন ডাইরেক্টরেট নিয়োজিত হন। পরে তিনি ব্রিগেডের অধিনায়ক হিসেবে দুটি ইনফেনট্রি ব্রিগেড ও একটি আর্টিলারি ব্রিগেডের অধিনায়ক ছিলেন। লেখক বাংলাদেশের ডিফেন্স সার্ভিসেস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করে দ্বিতীয়বারের মত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিখ্যাত ইউ এস এ কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ জেনারেল কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। তিনি পাকিস্তানের ন্যাশনাল ডিফেন্স এ ডি সি ইসলামাবাদ ইউনিভার্সিটির তত্ত্বাবধানে স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজে মাস্টার্স এবং ২০১১ সনে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস্, ঢাকা থেকে এমফিল ডিগ্রি লাভ করেন। তিনি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও ম্যাগাজিনে নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতি এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষণধর্মী কলাম ও বইয়ের লেখক হিসেবে অধিক পরিচিত। এ পর্যন্ত তার তেইশটি বহুল পঠিত বই প্রকাশিত হয়েছে। তা ছাড়া দেশী-বিদেশী ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় নিরাপত্তা ও ভূ-রাজনীতি এবং নির্বাচন বিষয়ে বিশ্লেষক হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত। ২০০৭ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১২ সনের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাঁচ বছর তিনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার রয়েছে। ২০০৮ সনের জাতীয় এবং স্থানীয় সরকারের পাঁচ হাজারের বেশি নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা।
স্পষ্টবাদী হিসেবে পরিচিত তিনি একজন মিলিটারি এনালিস্ট, নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ, কলামিস্ট এবং নিয়মিত টক শো তে অংশগ্রহণ করেন। জুলাই অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয় এবং তিনি ১০ দিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। এরপর তিনি পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবেও কিছুদিন কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োজিত আছেন।