বড় রাস্তা থেকে নেমে এসে জিপটা থামল টুরিস্ট লজের সামনে। একদম ঝকঝকে নতুন জিপ, চাকাগুলোর রঙ দেখলে মনে হয় যেন সদ্য রাস্তায় বেরিয়েছে। আওয়াজটাও সুন্দর। আজ সকাল থেকে আর কোনো গাড়ি আসে নি।
ব্যাংকের জানালায় দাঁড়িয়ে উৎসুকভাবে চেয়ে রইল হীরক। বাইরের জিপ মানেই অন্য জায়গার মানুষ, নতুন মানুষ। এইসব নতুন মানুষদের অন্তত এক ঝলক দেখে নিতে ইচ্ছে করে হীরকের। এখানকার স্থানীয় মানুষদের মুখ এমনকি প্রতিটি গাছপালাও যেন তার চেনা হয়ে গেছে। এ জায়গাটা বেশ সুন্দর তাতে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু সুন্দরও পুরোনো হয়ে যায়।
জিপ থেকে নামল দু'জন পুরুষ ও দুটি তরুণী। ব্যাংকের জানলা থেকে ওদের চোখ মুখ স্পষ্ট বোঝা যায় না কিন্তু পোশাক দেখে মনে হয়, এরা শহুরে মানুষও হতে পারে অথবা চা বাগানের।
টুরিস্ট লজটার সামনে সদ্য একটা বাগান করা হয়েছে এবং দু'পাশে বড় দুটি রঙিন ছাতার নিচে টেবিল-চেয়ার পাতা। পুরুষদের একজন চলে গেল ভেতরে, অন্যরা একটা ছাতার তলায় এসে বসল, পরক্ষণেই একটি তরুণী চেয়ার ছেড়ে প্রায় ছুটে চলে গেল চন্দ্রমল্লিকার ঝাড়টার কাছে। হীরক যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেখান থেকে ওদের কথাবার্তা শোনা যায় না। দৃশ্যটি নীরব চলচ্চিত্রের মতন মনে হয়। ওরা হাত নাড়ে, হাসে, একজন আর একজনের দিকে ঝুঁকে আসে, একজন বেয়ারা ওদের টেবিলের সামনে এসে থুতনি চুলকোয়।
একটা সিগারেট শেষ করতে করতে হীরক এই দৃশ্যটা দেখল। এরা হয়তো টুরিস্ট লজে রাত কাটাবার জন্য আসে নি, দুপুরের লাঞ্চ খেয়ে চলে যাবে। মেয়েরা কেউ ভেতরে গেল না, বাগানেই বসে রইল, তিন বোতল বিয়ার এল টেবিলে, তারপর এল টুরিস্ট লজের ম্যানেজার তাপস, সে একজন পুরুষের হাত ধরে ঝাঁকাল, এরা সবাই তাপসের চেনা নাকি?
'হীরকদা, একটা সই লাগবে!'