ফ্ল্যাপে লিখা কথা শাহীন রেজা-সমকালীন বাংলা কবিতার এক চন্দ্রলোকিত নক্ষত্রখচিত অনুভব। যার মধ্যে যেমন আছে স্নিগ্ধতা, স্বপ্নময়তা ঠিক তেমনি আছে ছায়ার মর্মর, অন্ধকারের আর্তনাদ। স্বপ্ন ও সত্যের মিশেলে গড়ে উঠা শাহীনের কবিতা তাই রহস্যময়, দ্বান্দিক। রমণী এবং প্রকৃতি যেমন তার কবিতার অনুসঙ্গ তেমনি প্রবলভাবে তাতে উপস্থিত জীবন ঘনিষ্ঠতা, জীবনের নানা অভিসন্ধি। শাহীন শব্দ নিয়ে খেলতে ভালোবাসেন। লিরিকধর্মী কবিতায় অত্যন্ত সাবলীল শাহীনের কবিতার প্রথম উচ্চারণ ‘প্রেম’। তবে এই প্রেম শুধু একজন বিশেষ নারীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ‘প্রেম’ কে তিনি ছড়িয়ে দিতে চান কর্মে মেধা ও মননে, ছড়িয়ে দিতে চান অরণ্য আকাশ কিংবা সমুদ্রে-সর্বোপরি এক এবং একক সৃষ্টিকর্তায়। শাহীন স্বপ্ন বিলাসী হলেও জীবনে নির্মমতা-চরম ও পরম সত্যকে বলেই তিনি চন্দ্রের পাশাপাশি সূর্যেরও অনুগামী। ১৯৬২ সালের ২৯ মে পিরোজপুর জেলার পুখুরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণকারী শাহীনের ছড়া ও কবিতায় হাতেখড়ি শৈশবে। তার প্রথম ছড়া প্রকাশিত হয় বাহাত্তরে- কবি তখন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র। প্রথম কবিতা প্রকাশের কাল পঁচাত্তর -কবি যে বছর পা রাখেন তেরোতে।
কবিতা সূচি * শ্রাবণে শ্রাবণ * জলের বেদনা * জাতিশ্মর যীশু * চাঁদের সেতার * দূরে আরো দূরে * রজনীর রথ * গৃহেশ্বর * ছায়া সর্বনাশ * বীজের নূপুর * শিশিরের হাত * প্রাণের রাখাল * প্রেমলতা কাশফুল * ফজল শাহাবুদ্দীন * নদী কলবর * ঘুম অবিরত * আমাদের কবি * তোমারি ইচ্ছায়
কবি শাহীন রেজা বাংলা সাহিত্যের একজন সংবেদনশীল ও মননশীল কণ্ঠস্বর। তাঁর কবিতায় ধ্বনিত হয় হৃদয়ের গভীরতম নিঃসঙ্গতা, সমাজের নিঃশব্দ বেদনা, প্রেম ও প্রতিবাদের জটিল ভাষ্য। কবিতার প্রতি তাঁর অনুরাগ ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, সময়ের দর্শন এবং জীবনের অন্তরঙ্গ অনুভূতির সংমিশ্রণে নির্মিত। তার কবিতার ভুবনে ফিরে ফিরে আসে নিঃসঙ্গতা, সময়ের নির্জনতা, নারীর অন্তর্লোক, ভালোবাসার চিরন্তন আকুতি এবং মানুষের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব। ‘বাতাসে নদীর ঘ্রাণ’, ‘অসতর্ক জ্যোনায়’, ‘নারীকাব্য’, ‘পাখি চলে গেলে কবি বড় একা’, ‘চরাচরে তীব্র নির্জনতা’, ‘জাতিষ্ণর যিশু’, ‘নির্বাচিত ৫০ কবিতা’ প্রভৃতি কাব্যগ্রন্থ তাঁর সৃষ্টিশীলতার অনন্য দৃষ্টান্ত। শাহীন রেজার কবিতায় শব্দের গভীরে লুকিয়ে থাকে মানবিকতা ও জীবনের নরম কঠিন রূপান্তর। প্রেম ও দ্রোহ, নিঃসঙ্গতা ও উচ্চারণহীন আর্তনাদের ভাষা হয়ে ওঠে তাঁর কবিতা। তিনি শব্দের অন্দরমহলে প্রবেশ করে তৈরি করেছেন এক ধরনের গভীরতাসম্পন্ন অনুভব-ভাষা, যা পাঠকের হৃদয়ে দীর্ঘস্থায়ী অভিঘাত সৃষ্টি করে। বাংলা কবিতার ভুবনে তিনি এক নিবেদিতপ্রাণ স্রষ্টা, যাঁর কলম নিরবধি প্রশ্ন তোলে, কাঁদে, ভালোবাসে এবং প্রতিটি ছত্রে পাঠককে ভাবনায় ডোবায়। সাহিত্যের দায়বদ্ধতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিই তাঁর কবিতার চালিকা শক্তি। তিনি একজন সক্রিয় ও নিবেদিত কবি, যার সাহিত্যকর্ম চলমান।