মানুষ বই কেন পড়ে? এক সময় এর সরল উত্তর ছিলো জ্ঞানার্জন করা। গল্প, ঘটনা, ইতিহাস যা নির্ভরই হোক—বইয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিলো মানুষকে সভ্য-ভব্য করে তোলা। কালের বিবর্তনে আস্তে আস্তে করে সে উদ্দেশ্যটি বিলীন হয়ে গেছে। সে জায়গা অনেকাংশে দখল করে নিয়েছে আনন্দ। একেক মানুষ একেক কাজে আনন্দ পায়। কেউ সিনেমা দেখে, নাটক দেখে, কেউ খেলা-ধুলা করে, আর কেউ বা বই পড়ে। কিন্তু ইসলামের আলোটাকে যদি আমরা একটু মনের ঘরে ঢুকতে দিই তবেই দেখবো, আমরা নিছক মজা করার জন্য আমাদের সময় নষ্ট করতে পারি না। কারণ সময় মানে জীবন। আর জীবনকে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাই ইসলামী রচনায় পাঠককে কেবল গল্পে মজিয়ে রাখা, রোমাঞ্চকর আনন্দ দেওয়া কিংবা ভাষা-সাহিত্যের রং-ঢং দিয়ে মন মাতানো কখনও মূল উদ্দেশ্য নয়; বরং এখানে এধরণের উপকরণ উপদেশ ও শিক্ষণীয় বক্তব্যের বাহন মাত্র। উপস্থাপনাশৈলী কম গুরুত্বপূর্ণ নয়; তবে তা কিছুতেই মূল উদ্দেশ্য নয়। ভাষার কারুকার্য কেবল তার বহন করা বক্তব্যকে হৃদয়গ্রাহী ও তাৎপর্যপূর্ণ করে তোলা। ইসলামী সাহিত্য-রচনা অবশ্যই বক্তব্য, শিক্ষা, জ্ঞান ও উদ্দেশ্যনির্ভর। আর সেই মূল উদ্দেশ্যটি হলো, নিজের ও পাঠকদের হৃদয়ের সংযোগ স্থাপন করা—সাত আকাশের উপরের সাথে। এই সংযোগ কেটে দেওয়ার জন্য যগে যুগে নতুন নতুন রূপ-রঙ্গে সজ্জিত হয়ে আবির্ভূত হওয়া মিথ্যা ও বাতিলের মুখোশটা খুলে তার কদর্য রূপটা মানুষকে চিনিয়ে দেওয়া—নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের আলো জ্বালিয়ে। অজ্ঞানতার অন্ধকারকে যারা জ্ঞানের আলো জ্বেলে দূর করতে চান, সিয়ান তাদের জন্য একটি প্লাটফর্ম তৈরির চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করি যিনি আমাদের চয়ন বইটিতে এমনই ক’জন মানুষের কলমগুলোকে সন্নিবেশিত করার তাওফিক দিয়েছেন। চিন্তাগত ঐক্যের অদৃশ্য সেতু সবার মধ্যে এক অন্যরকম বন্ধন তৈরি করে দিয়েছে—যা কোনো বৈষয়িক সূত্রে নয় বরং আল্লাহর ভালোবাসার সূতোয় গাঁথা। আশা করি, এ কলমগুলোর সাথে নিকট ভবিষ্যতে আমরা আরও অনেক কলম যুক্ত করতে পারবো ইনশা আল্লাহ। চয়ন আশা করি আধুনিক সামাজিক প্রেক্ষাপটে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ রাষ্ট্র নিয়ে নানা রকম বিশ্লেষণে সমৃদ্ধ এ বইটি আশা করি আপনার মনে চিন্তার কিছু খোরাক যোগাতে পারবে ইনশা আল্লাহ।
ড. মোহাম্মদ মানজুরে ইলাহী মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শরী’আহ অনুষদে ১৯৮৮ সাল হতে ২০০২ সাল পর্যন্ত অধ্যয়ন করেছেন। মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রী প্রাপ্ত তিনিই প্রথম বাংলাদেশী। তিনি মদীনার প্রখ্যাত যে সকল শাইখের কাছ থেকে সরাসরি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন - শাইখ ড. আবদুল মুহসিন আল-’আব্বাদ, ড. আবদুল ‘আযীয আশ-শিবল, ড. মুহাম্মাদ খলীফা আত-তমীমমী, ড. মুহাম্মাদ আল-মুখতার ইবন মুহাম্মাদ আল-আমীন আশ-শানকীতী, ড. আব্দুল্লাহ আত-তুরাইকী, ড. মুহাম্মাদ ইবন মুহাম্মাদ আল-মুখতার ও ড. সুলাইমান আর-রুহাইলী প্রমুখ। আর যাদের শিক্ষামূলক আলোচনা, লেকচার, হালাকা ও দারসে তিনি সরাসরি বসেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন- শাইখ আবদুল ’আযীয ইবন বায, শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালিহ আল-ফাওযান, শাইখ সালিহ আল-লুহাইদান, ড. আবদুল্লাহ আল-গুনাইমান, ড. সালিহ আস-সুহাইমী ও ড. আবদুল রাযযাক আল-’আব্বাদ প্রমুখ। মদীনার শিক্ষা জীবনের শুরু থেকেই তিনি ছিলেন জ্ঞানপিপাসু। সহী জ্ঞানের সন্ধানে তিনি সৌদি আরবের বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে যেমন কাটিয়েছেন দিনের পর দিন, তেমনি দেখা করেছেন অনেক শাইখ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত প্রফেসরদের সাথে। হজ্জ ও ‘উমরার মৌসুমে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন বিভিন্ন দেশ থেকে আগত দেশবরেণ্য ’উলামায়ে কেরাম, শিক্ষাবিদ ও মুফতীগণের সাথে। তাদের জ্ঞানের নানামুখী দীপ্তি ও অভিজ্ঞতা দ্বারা তিনি সমৃদ্ধ হয়েছেন। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ ও তার সুযোগ্য দুই ছাত্র ইবনুল কাইয়্যিম ও ইবন কাসীরের লেখা জ্ঞান সমৃদ্ধ রচনাবলী থেকে তিনি মণি-মুক্তা আহরণ করেছেন, প্রভাবিত হয়েছেন এবং উদ্দীপ্ত হয়েছেন। মদীনায় তিনি কুরআন ও সুন্নাহর সঠিক জ্ঞান অনুসন্ধানে ব্যাপৃত ছিলেন এবং সালাফে সালেহীন তথা সাহাবায়ে কেরাম, আয়িম্মাতুল হুদা ও তাদের অনুসারী মুহাক্কিক ‘উলামায়ে কেরাম ইসলামের যে সত্য ও সঠিক পথের নির্দেশনা দিয়েছেন, সে আলোকে তিনি তার আলোচনা, গবেষণা ও লেখনি চালিয়ে যাওয়ার অবিরাম চেষ্টা করে চলেছেন। বর্তমানে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। এখানে তার তত্ত্বাবধানে বহু গবেষক এম. ফিল. ও পিএইচডি করছেন। জাতীয় ও আন্তার্জাতিক মিডিয়ায় ইসলামের প্রচার ও প্রসারের কাজে তার উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। এছাড়াও তিনি নানামুখী গবেষণা ও কারিকুলাম কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। আল্লাহ তার অবদান কবুল করুন।