এই বিশ্বস্রষ্টার নির্দেশে গ্রামের ছেলে সন্দীপ লাহিড়ী একদিন কলকাতা শহরে এসেছিল। তখন সে বালক। এসে এমন একটা বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল যেখানে অর্থসামর্থ্য আর প্রাচুর্য্যের অপ্রতিহত স্থিতি। সেই অর্থ-সামর্থ্য আর প্রাচুর্য্যের পরিবেশ কল্পনাতীত ছিল। তখন থেকে এই শহরে চরম দারিদ্র্য দেখলে, চরম বৈরাগ্য দেখলে, ঐশ্বর্য্য দেখলে, তার সঙ্গে দেখলে প্রত্যেকটি মানুষের সঙ্গে প্রত্যেকটি মানুষের সবরকম প্রতিযোগিতা—অর্থের প্রতিযোগিতা, অনর্থের প্রতিযোগিতা, দম্ভের প্রতিযোগিতা, ক্ষমতার প্রতিযোগিতা। সব কিছু দেখে সন্দীপ ভাবলে—এ কোথায় এলাম আমি, চারপাশের এই সব কারা? অথচ তারই মতন সকলের দু'টো করে হাত আছে, দু'টো করে পা আছে, একটা করে মাথা আছে—অথচ এদেরও তো সবাই মানুষ বলে জানে, মানুষ বলে ভাবে।
সে ভাবতে লাগলো তাহলে তার কী করণীয়, তার কী কর্তব্য, তার কী লক্ষ্য হওয়া উচিত? কী করলে সে মানুষ পদবাচ্য হবে? কী করলে তার মনুষ্য-জন্ম সার্থক হবে, সম্পূর্ণ হবে? সেই প্রশ্নের উত্তরই সে সারা জীবন ধরে খুঁজতে লাগলো। খুঁজতে লাগলো কোথায় তার আদি, কোথায় তার অন্ত? আদি-অন্তহীন যে অনন্ত, তার সন্ধান সে কী করে কোথায় পাবে? কার কাছ থেকে পাবে?
আর সম্পূর্ণতা?
সে সম্পূর্ণই বা হবে কোন পথে? যখন সে এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাবে তখন কি সে এই জগৎ সংসারকে অন্যদের মতো কেবল বঞ্চনা করেই যাবে? মানুষের জন্যে এতটুকু সত্য, এক কণা মঙ্গলও কি সে রেখে যেতে পারবে না? সামান্য এই দেহটার পরিচর্যা করেই বেঁচে থাকবে? এই নশ্বর নরদেহটা ?