দৈনন্দিন জীবনযাপনের ভাষায় তথা গদ্যে কাহিনি লেখার উদ্ভব ঘটে ইতিহাসের এক বিশেষ পর্বে। মুখে মুখে রচিত কাহিনি যেমন রূপকথা, উপকথা, পুরাণ, জাতকের গল্প ইত্যাদি পরে গদ্যে লিপিবদ্ধ হলেও মানুষ এবং মানুষের জীবন জীবন ওইসব কাহিনির প্রধান বিষয় হতে পারেনি। কারণ তখনো সমাজে ব্যক্তি মানুষের অধিকার স্বীকৃত হয়নি, গড়ে ওঠেনি তার ব্যক্তিত্ব; ফলে কাহিনিতে ব্যক্তির প্রাধান্য লাভের উপায়ও ছিল অসম্ভব। ইউরোপে যখন বাণিজ্য পুঁজির বিকাশ শুরু হয় তখন ধীরে ধীরে মধ্যযুগীয় চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণার অবসান ঘটতে থাকে।
খ্রিষ্টীয় চৌদ্দো-ষোলো শতকে নবজাগরণ বা রেনেসাঁসের ফলে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয় জ্ঞান ও মুক্তবুদ্ধির চর্চা বিজ্ঞান ও যুক্তিনির্ভরতা, ইহজাগতিক এবং মানবতাবাদ। ক্রমে যা হয়ে ওঠে শিক্ষিত সমাজের সচেতন জীবনযাপনের অঙ্গ। রেনেসাঁসের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করে সেক্যুলারিজম প্রতিষ্ঠিত হলে বিজ্ঞান ও দর্শনের অগ্রগতি বাধাহীন হয়ে ওঠে।
এরই মধ্যে ধারাবাহিকতায় বাণিজ্য পুঁজির বিকাশ আরম্ভ হলে সমাজে বণিক শ্রেণির গুরুত্ব বৃদ্ধি পায় এবং রাজা, সামন্ত-ভূস্বামী এবং পুরোহিতদের সামাজিক গুরুত্ব হ্রাস পেতে থাকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ভাগ্যনির্ভরতা পরিহার করে মানুষ হয়ে ওঠে স্বাবলম্বী, অধিকার-সচেতন এবং আত্ম প্রতিষ্ঠায় উন্মুখ।